ঢাকা: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন দেওয়া এবং পুলিশ-নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এদিন সড়কে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান।
কিশোরগঞ্জে অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুজনের প্রাণ গেছে। দিনের প্রথমার্ধে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দুটি বাস ভাঙচুর করেন অবরোধকারীরা।
অবরোধ ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। প্রথম দিনে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা।
এদিন রাজধানী ঢাকায় যানবাহন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম ছিল। নিত্যদিনের যানজটের দেখা মেলেনি কোথাও। জনমনে কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও জীবিকার তাগিদে কর্মস্থলে ছোটেন কেউ কেউ। রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।
বিএনপির তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সতর্ক পাহারায় ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি বলেন, বিএনপি নাশকতার নামে নির্বাচন বানচাল, জনগণের জানমালের ক্ষতি করে দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যেতে চায়। তাদের এই সহিংসতার বিরুদ্ধে, জনগণের জানমাল রক্ষায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা সতর্ক পাহারায় রয়েছি।
অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হাইকোর্ট মোড়ের কদম ফোয়ারার সামনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কদমতলী থানার মুন্সিখোলায় একটি বাসে ভাঙচুর ও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এদিকে পুরান ঢাকার চানখাঁরপুলের চাঁন কমিউনিটি সেন্টারের সামনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন, পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হালিম ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুভঙ্কর রায়।
রাজধানীতে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনাল ও আশপাশের অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, গণপরিবহন চলাচল সীমিত রয়েছে। দূরপাল্লার বাস ও আন্তঃজেলার বাস চলাচলও ছিল সীমিত। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী ও বাড়ি ফেরা যাত্রীরা। তবে ট্রেন, লঞ্চ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস চলাচল করেছে।
অবরোধের সমর্থনে সুপ্রিম কোর্টে বিএনপিপন্থী আইনজীবী মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে থেকে কয়েকশ আইনজীবী মিছিল নিয়ে সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে হাইকোর্টের মাজার গেটে সেটি আটকে দেয় পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঢাকার সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত ভালো। অবরোধে মানুষ সাড়া দিয়েছে বলে মনে হয় না। সাধারণ মানুষ রাস্তায় বের হয়ে আসছে। যানবাহন ও ট্রেন চলছে এবং সবকিছুই স্বাভাবিক চলছে। অবরোধের প্রভাব জনজীবনে এখনো পর্যন্ত পড়েনি। ঢাকায় মিরপুরে পাঁচজন জামায়াত কর্মীসহ ১৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি।
অপরদিকে অবরোধের সমর্থনে রাজধানীতে বেশ কয়েটি স্থানে কর্মসূচি পালন করে জামায়াতে ইসলামী। এতে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৩
টিএ/আরএইচ