মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের উপর নির্মিত বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘লিটন চৌধুরী সেতু’ শনিবার (৪ নভেম্বর) উদ্বোধন হচ্ছে। এ সেতুটির মাধ্যমে উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন শিরুয়াইল, নিলখী ও দত্তপাড়া ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকাসহ আশেপাশের এলাকার লক্ষাধিক মানুষের যুগ যুগ ধরে থাকা ভোগান্তির অবসান হবে।
স্থানীয়দের দাবি, সেতুটির ফলে উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথের যোগাযোগ স্থাপন হলো। মাত্র ১৫ মিনিটেই উপজেলা সদরে পৌঁছানো যাবে এই সেতু দিয়ে। এর ফলে ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে নদী পাড়ের মানুষের। এছাড়া শিক্ষার্থীরা সহজেই কলেজে যেতে পারবে, মানুষের জীবন যাত্রার উন্নয়ন ঘটবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে আড়িয়াল খাঁ নদ উপজেলা সদর থেকে তিনটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামকে সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। শিবচর যেতে হলে বিশেষ করে শিরুয়াইল ইউনিয়নের উৎরাইলসহ দত্তপাড়া, নিলখী ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষের এই পথে ট্রলারে নদী পাড় হতে হয়। বর্ষায় উত্তাল নদী আর অধিক যাত্রীর জন্য ট্রলার চালকদের অধিক সময় ঘাটে বসে থাকতে হতো। এছাড়া ট্রলার না পাওয়াসহ নানাবিধ ভোগান্তি মাথায় নিয়ে শিবচর যেতে হয় এই অঞ্চলের মানুষের!। আড়িয়াল খাঁ নদের উপর নির্মিত ‘লিটন চৌধুরী’ সেতুর মধ্য দিয়ে মানুষের এই ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে।
শিবচর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শুরু হয় সেতুটির নির্মাণ কাজ। অবশেষে সেতুটি আগামীকাল শনিবার উদ্বোধন করা হবে। ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯.৮০ মিটার প্রস্থের সেতুটিতে স্প্যান সংখ্যা ১১টি এবং পিয়ার সংখ্যা নয়টি। সেতুটির পাইলের সংখ্যা ১২৩টি, পাইলের দৈর্ঘ্য ৪৮ মিটার। সেতুর জন্য অ্যাপ্রোচ সড়কের (সংযোগ সড়ক) দৈর্ঘ্য ১.৫০ কিলোমিটার। ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. মইন উদ্দীন বাঁশি ও হা-মিম ইন্টারন্যাশনাল।
উৎরাইল এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, আড়িয়াল খাঁ নদ পার হলে মাত্র ১৫ মিনিটেই উপজেলা শহরে পৌঁছানো যায়। নদ পার হলে উপজেলা সদর মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব। আর মহাসড়ক ঘুরে গেলে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ!। সেতু চালু হলে যোগাযোগের আমূল পরিবর্তন আসবে। ফলে এলাকার মানুষ অনেক উপকৃত।
মিয়াউল আলম চৌধুরী নামের স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, নদীর পশ্চিম পাড়ে আমরা যারা বসবাস করছি তাদের কাছে এই সেতুর গুরুত্ব বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমরা চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী মহোদয়ের নিকট বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
শিবচর উপজেলা প্রকৌশলী কে এম রেজাউল করিম জানান, সেতুটির কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ জনাব নূর-ই আলম চৌধুরী এমপি আগামীকাল শনিবার সেতুটির উদ্বোধন করবেন। এই সেতুটি শিবচরের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম দ্বার তৈরি করবে। এই অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সেতুটি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী। সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে ‘লিটন চৌধুরী সেতু’। ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯.৮০ মিটার প্রস্থের সেতুটিতে স্প্যান সংখ্যা ১১টি এবং পিয়ার সংখ্যা ৯টি। সেতুটির পাইলের সংখ্যা ১২৩টি, পাইলের দৈর্ঘ্য ৪৮ মিটার। সেতুর জন্য অ্যাপ্রোচ সড়কের (সংযোগ সড়ক) দৈর্ঘ্য ১.৫০ কিলোমিটার। সেতুটিতে সড়ক বাতিও সংযোগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২৩
এসএম