ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নওগাঁ পৌর মেয়র নজমুল হক সনির বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের অনাস্থা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
নওগাঁ পৌর মেয়র নজমুল হক সনির বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের অনাস্থা

নওগাঁ: নওগাঁ পৌরসভার মেয়র মো. নজমুল হক সনির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন নওগাঁ পৌরসভার ১১ জন কাউন্সিলর।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকালে এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লেখা অনাস্থা প্রস্তাবের কপি নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলার কাছে দিয়েছেন নওগাঁ পৌরসভার কাউন্সিলররা।

অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদনে নওগাঁ পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের নয়জন কাউন্সিলর ও দুজন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর স্বাক্ষর করেছেন।  

সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ সুপার বরাবর এ আবেদনের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

আবেদন সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ পৌরসভার মেয়র মো. নজমুল হক সনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নয়টি সাধারণ কাউন্সিলর ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সঙ্গে বিভিন্ন সময় অশালীন আচরণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি করে আসছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক শ্রমিক দেখিয়ে পারিশ্রমিকের অর্থ উত্তোলন করেছেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময় গোপনে কোটেশনের মাধ্যমে টেন্ডার করে পরে কাজ না করে অর্থ তুলে নিয়েছেন। মাসিক সভায় আলোচনা ছাড়াই নিজের ইচ্ছা মতো রেজুলেশনে বিভিন্ন ব্যয় দেখিয়ে টাকা তুলে নেন তিনি। এসব বিষয়ে বার বার নিষেধ করার পরও তিনি কথা শোনেননি।

এছাড়া, নওগাঁ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ল্যান্ড ফিল্ড) স্থাপনা, নতুন পৌর ভবন নির্মাণ কাজ তিনি করছেন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। এসব বিষয়ে মাসিক সভায় কাউন্সিলররা মেয়রের কাছে অভিযোগ করলে তিনি তা আমলে না নিয়ে উল্টো কাউন্সিলরদের বলেন, পৌরসভার প্রধান আমি, কাজটা আমার, অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করুক, আমি তা চাই না।

অভিযোগে আরও জানা যায়, দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজের ক্ষেত্রে মেয়র সনির অনিয়ম নিয়ে মুখ খুলে বিপাকে পড়েছেন জাকের আলী নামে এক শ্রমিক। তার অভিযোগ, অনিয়মের কথা বলায় তাকে গত ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল পিটিয়ে আহত করেন মেয়র। এ অভিযোগে তিনি নওগাঁ সদর মডেল থানায় মেয়রের নামে মামলাও করেছেন।

এছাড়া পরপর কয়েকবার রাতে পৌরসভার কয়েকটি শাখা থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথিপত্র চুরি হয়ে গেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মেয়রকে মাসিক সভায় দায়িত্ব দিলেও তিনি এখানো চুরির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি।  

এছাড়া তিনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।

গত ৩১ অক্টোবর মাসিক সভায় এসব অভিযোগের বিষয়ে নওগাঁ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শরিফুল ইসলাম শরিফের প্রস্তাবে মেয়রের বিরুদ্ধে সবাই অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

নওগাঁ পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার তানজিদ সম্রাট বলেন, আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নওগাঁ পৌরসভার বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার আছি। অনেকবার মাসিক সভায় এবং মৌখিকভাবে এসব অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করতে মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের সব সময়ই পাশ কাটিয়ে গেছেন। আমরা কাউন্সিলররা আমাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারছি না। আমরা দিন দিন মেয়রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছি। এজন্য অনেকটাই বাধ্য হয়ে জরুরি সভার মাধ্যমে মেয়রের প্রতি অনাস্থা এনেছি এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেছি।

এ ব্যাপারে নওগাঁ পৌরসভার মেয়র মো. নজমুল হক সনি বলেন, আমি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি। আমি পর পর তিনবার নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। বিগত প্রায় সাড়ে ১২ বছর আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পৌরসভাকে পরিচালনা করে আসছি। বর্তমান পৌর পরিষদের অধিকাংশ কাউন্সিলর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অন্যায় দাবি করে আসছিলেন। যা আমার পক্ষে পৌরসভার মেয়র হিসেবে পূরণ করা সম্ভব নয়। এ কারণে বিভিন্ন সময় তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এছাড়া বর্তমানে সারাদেশে বিএনপি এক দফা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে নিয়মিত অফিস করতে পারছি না। এ সুযোগে পৌর কাউন্সিলরা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। আমি মনে করি, এটা আমার বিরুদ্ধে গভীর যড়যন্ত্র, অপপ্রচার ও মিথ্যাচার।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা জানান, এরই মধ্য অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদন আমার কাছে পৌর কাউন্সিলররা দিয়ে গেছেন। এটা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লেখা। এখানে আমার কিছু করার নাই। আমি আজ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদনপত্রটি পাঠাব। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।