ঢাকা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সবুজ বিদ্যাপীঠ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. কাওছার আলী শেখকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠানের আয়ের খাতের এক কোটি ৪২ লাখ সাত হাজার ৪৮৯ টাকা এবং ব্যয়ের খাতে এক কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ২৫০ টাকা দুর্নীতির অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে গত শনিবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী আবুল কালাম অনু স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, কাওছার আলীর বিরুদ্ধে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত উল্লিখিত পরিমাণ টাকা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য দুই বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও জবাব পাওয়া যায়নি।
চিঠিতে আর্থিক দুর্নীতি ছাড়াও জাল সনদের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়কে নিয়োগ, এমপিওভুক্তির আশ্বাসে টাকা আদায়, নারী শিক্ষকদের নিপীড়নসহ প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় না দিয়ে জমি ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এসব অভিযোগে ‘স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকগণের চাকরির শর্ত বিধিমালা-১৯৭৯’ অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং উল্লিখিত পরিমাণ টাকা জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
বিধি মোতাবেক কাওছার আলী খোরপোষ ভাতা পাবেন। তবে বিধি বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করায় সেখান থেকে ফেরত বা সমন্বয় করা হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে জাতীয়করণের দাবিতে গত জুলাইয়ে ঢাকায় সারাদেশের শিক্ষকদের প্রায় মাসব্যাপী জমায়েতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কাওছার আলী। তিনি সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কাওছার আলী বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয়করণের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় থেকে একটি পক্ষ আমার পেছনে লেগে আছে। আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান কমিটি একটি মনগড়া অডিটের নামে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে যা ষড়যন্ত্রমূলক। ২০২১ সাল পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট ছাড়াও ইন্টারনাল অডিট করা আছে। মূলত বর্তমান কমিটির অনিয়ম-দুর্নীতিতে বাধা দেওয়ায় মনগড়া অডিটের নামে রাতের অন্ধকারে মিটিং করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাকে চিঠি না দিয়ে স্কুলে আমার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরে বোর্ড নির্ধারিত এসএসসির ফরম পূরণে ফি বাবদ বাড়তি ছয় হাজার টাকা নিয়ে মোট ৮ হাজার ১৪০ টাকা নেওয়া হয়েছে। আর মনগড়া অডিট করে পাঁচ লাখ টাকার বিল সাবমিট করা হয়েছে। আর বর্তমান কমিটির সদস্যদের মধ্যে দুইজন অবৈধ, তাদের কোনো সন্তান স্কুলে পড়ে না।
এদিকে, কাওছার আলীকে বরখাস্ত ও বর্তমান কমিটির নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি কর্মসূচি ঘোষণা করছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
বক্তব্যের জন্য প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী আবুল কালাম অনুকে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
এমআইএইচ/এমজে