ঢাকা: আমাদের দেশের সড়কের নিরাপত্তা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, উন্নত দেশের তুলনায় আমরা কোনো কিছুতে কোনো গণনার মধ্যেই পড়ি না।
রোববার (১৯ নভেম্বর) সকালে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) ‘ওয়ার্ল্ড ডে অব রিমেমবারেন্স ফর রোড ট্রাফিক ভিক্টিমস’ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিমিন হোসেন রিমি বলেন, আমার বর্তমান যে অবস্থান, সেটা বাদ দিয়ে মানুষ হিসেবে যদি আমি বলি, আমার দুই একটা উন্নত দেশের যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমার মনে হয়, সেসব (উন্নত) দেশের তুলনায় আমরা কোনো কিছুতে কোনো গণনার মধ্যেই পড়ি না। আমাদের দেশে সড়কের জন্য যা কিছু আইন কানুন হয়, তা যেন বাস ট্রাক মালিক সমিতির জন্য হয়। কিন্তু সেখানে মানুষ যে ভুক্তভোগী তাদের জন্য আসলে কিছু হয় না। বিদেশে যেটা আছে তারা জন্মগতভাবেই আইনটাকে মেনেই বড় হয়। আমরা যদি সেভাবে আমাদের আইনটাকে তৈরি করতে পারি, এছাড়া আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।
বিভিন্ন দেশের সড়কের নিয়ম-কানুন প্রসঙ্গে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় আমার দেখার সুযোগ হয়েছে ক্রিসমাসে অনেকেই একটু মাদকাসক্ত অবস্থায় ড্রাইভিং করে। পুলিশ সেখানে অনবরত কয়েক সেকেন্ডেই চেক করে ফেলছে ড্রাইভার মাদকাসক্ত কিনা। আমেরিকার বড় হাইওয়েগুলোতে আমি নিজে দেখেছি গতিসীমা অতিক্রম করলেই কোথায় থেকে যেন জাদুর মতো পুলিশ চলে আসে। আর সরু রাস্তাগুলাতে স্পিড মিটারের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছে। আমাদের দেশে তো এটা আমরা এখনও চিন্তাই করতে পারি না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, আমাদের দেশে এখনও ট্রাফিক পুলিশ হাত দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা যখন ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে প্রবেশ করি তখন সেখানে সবকিছুই ট্রাফিক সিগন্যাল অনুযায়ী চলে। আমি ট্রাফিক সিগন্যাল দেখে বড় হয়েছি, ট্রাফিকের হাত দেখে বড় হইনি। ঢাকার নবাবপুর রোডে শুধু ট্রাফিক পুলিশ দেখতাম। এছাড়া ঢাকার সব জায়গাতেই ট্রাফিক সিগন্যাল অনুযায়ী চলত। সেই ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে কিভাবে আমরা ট্রাফিকের হাতে চলে আসলাম এটা আমি বুঝি না।
তিনি আরও বলেন, বাস ট্রাক মালিক সমিতির সবাই কিন্তু বিশাল শক্তিধর মানুষ। ওই শক্তিটা যদি না ভাঙা যায়, তাহলে কিন্তু কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। মালিকপক্ষ বসবে, তারা তাদের মতো করে আইন করবে, তাহলে রোড সেফটির যে বিষয় সেটাই থাকবে না, কোনোদিন হবে না। দরকষাকষি করে মালিকপক্ষ যেটাতে খুশি সেটাই হবে। পাশাপাশি মানুষকেও রোড সেফটির বিষয়ে বোঝাতে হবে, সচেতন করতে হবে। ক্যান্টনমেন্টের ভেতর যদি সবাই আইন মানতে পারে, তাহলে সারাদেশে কেন মানতে পারবে না। আমাদের সড়কগুলোতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। যে যেভাবে পারছে সড়ক ব্যবহার করছে। ফলে দেশে দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং আইন মানার সদিচ্ছা থাকতে হবে।
নিটোর পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম উজ্জামানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব এবং নিটোরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী)।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোনায়েম হোসেন, সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের ইন-কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর ড. শরিফুল আলম।
রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের উদ্যোগে বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটি ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারের পূর্বে একটি র্যালির অনুষ্ঠিত হয়।
রোডক্র্যাশে হতাহতদের স্মরণে প্রতিবছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী ‘ওয়ার্ল্ড ডে অব রিমেমব্রেন্স ফর রোড ট্রাফিক ভিক্টিমস’ পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো রিমেমবার, সাপোর্ট, অ্যাক্ট অর্থাৎ ‘আমরা স্মরণ করি যারা রোডক্র্যাশে মারা গেছেন তাদের, সহায়তা নিয়ে থাকতে চাই আহতদের পাশে এবং জীবন বাঁচাতে নিতে চাই কার্যকর উদ্যোগ’।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৩
আরকেআর/জেএইচ