বরিশাল: পৃথক দুর্ঘটনায় দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চের কমপক্ষে ১৬ জন যাত্রী আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (০৪ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে চাঁদপুরের এখলাসপুরে সুন্দরবন ১৬- লঞ্চের সঙ্গে অপর একটি কোস্টার জাহাজের সংঘর্ষ ঘটে।
এমভি চন্দ্রদ্বীপ লঞ্চের কেরানি সোহেল জানান, সকাল ৬টার দিকে তারা যাত্রী নিয়ে লক্ষীপুরের মজুচৌধুরীর হাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বরিশাল নদী বন্দর ত্যাগ করে রসুলপুরের চরের মোড় অতিক্রমকালে এমভি অ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চটির সঙ্গে এমভি চন্দ্রদ্বীপ লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। এতে এমভি অ্যাডভেঞ্চার-১ তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও এমভি চন্দ্রদ্বীপ লঞ্চের সামনের ডানপাশের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় এমভি চন্দ্রদ্বীপ লঞ্চের ১২ জন যাত্রী কমবেশি আহত হন। যাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লঞ্চের মাস্টার মো. মিলন জানান, দুর্ঘটনার সময় ৫০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন লঞ্চটিতে, যাদের অন্য একটি লঞ্চে তুলে দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের লঞ্চের যাত্রা বাতিল করে বরিশাল নদী বন্দরে নোঙর করে রাখা হয়েছে। মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে।
এ বিষয়ে বরিশাল সদর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. জলিল বলেন, কীর্তনখোলা নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনার বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ সদস্যরা পৌঁছান। কেউ গুরুতর আহত হননি। যে কয়জন আহত হয়েছেন তারা নিজ উদ্যোগে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। আর দুর্ঘটনার পর এমভি অ্যাডভেঞ্চার-১ ও এমভি চন্দ্রদ্বীপ নামক লঞ্চ দুটি বরিশাল নদী বন্দরে নোঙর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
অপরদিকে ঢাকা থেকে বরিশালে আসার পথে চাঁদপুরের এখলাসপুরে সুন্দরবন ১৬- লঞ্চের সাথে অপর একটি কোস্টার জাহাজের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সুন্দরবন ১৬- লঞ্চের সুপারভাইজার সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জানান, রাত ৯ টার দিকে সদরঘাট থেকে ৫শত যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় সুন্দরবন-১৬ লঞ্চ। রাত সাড়ে ১২টার দিকে লঞ্চটি চাঁদপুরের এখলাসপুর অতিক্রম করে মেঘনা নদী ধরে যখন বরিশালের দিকে যাচ্ছিল, তখন একটি কোস্টার জাহাজ আড়াআড়িভাবে লঞ্চের পেছনের সিঁড়ির অংশে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে লঞ্চের নিচতলা, দোতলার ওই অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ২ যাত্রীসহ ৪ জন আহত হন।
আহতদের মধ্যে কারও অবস্থাই শঙ্কাজনক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই লঞ্চটিকে পার্শ্ববর্তী চরে নোঙর করা হয়। পরে বরিশালগামী এমভি সুন্দরবন-১৫ লঞ্চে ডেকের যাত্রীদের তুলে দেওয়া হয়। নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য এমভি সুন্দরবন-১৪ লঞ্চে কেবিনের যাত্রীদের তুলে দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় ওই কোস্টার জাহাজটি বিরুদ্ধে মেরিন আইনে মামলা দায়ের করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জাহাজটি কোনদিকে যাচ্ছিল তাই বোঝা যায়নি। ২০-২৫ হাত জায়গা থাকলেও দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু কোস্টার জাহাজের গতির কারণে কুয়াশার মধ্যে তা সম্ভব হয়নি।
এমভি সুন্দরবন-১৬ টিকে মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে নেয়া হবেও বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রিয়াদ হোসেন জানান, দুর্ঘটনা কবলিত সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের যাত্রীদের যে দুটি লঞ্চে নিয়ে আসা হচ্ছে, তারমধ্যে একটি লঞ্চ এরই মধ্যে এসে পৌঁছেছে। অন্যটিও পথে রয়েছে। তেমন কোনো যাত্রী আহত নেই। আর কীর্তনখোলা নদীতে চন্দ্রদ্বীপ লঞ্চটির যাত্রীদেরও নিরাপদে গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে। আর যে কয়েকজন আহত হয়েছেন তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। উভয় দুর্ঘটনাই কুয়াশার কারণে ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৪
এমএস/এসএএইচ