ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন

১৭ মিনিটের ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ে যা হয়েছিল...

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৪
১৭ মিনিটের ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ে যা হয়েছিল...

ঢাকা: বিএনপি নেতাদের ১৭ মিনিটের এক ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেসে ট্রেনে আগুন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় পৌঁছানোর আগে ট্রেনটিতে আগুন দেওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ভার্চ্যুয়াল মিটিংটি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুববদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনামের সভাপতিত্বে মিটিং থেকেই একজনকে ট্রেনে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মিটিংয়ের পর শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯ টা ৫ মিনিটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়।

বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন চারজন। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮ জন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তারের পর ট্রেনে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় যুবদল নেতা কাজী মনসুরকে। তিনিই ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ের তথ্য নিশ্চিত করেন। জানান, মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম, যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়নসহ আরও অনেকে। মিটিংটি ১৭ মিনিট ধরে চলে।

ভার্চ্যুয়াল এ মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় দুটি। প্রথম সিদ্ধান্ত, ভোট কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ। যাতে ভোটাররা ভয়ে কেন্দ্রে না যেতে পারে। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হয় ট্রেনে আগুনের। মিটিংয়ে যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন জিজ্ঞাসা করেন- ট্রেনে কে আগুন দিতে পারবে? অপর এক নেতা এ বিষয়ে সম্মত হয়ে নিজেই ট্রেনে আগুন দিতে রাজি হন।

মনসুর পুলিশকে আরও জানান, মিটিংয়ে রবিউল ইসলাম কিশোরগঞ্জ থেকে আগত কোনো ট্রেন ঢাকায় ঢোকার পর বা নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেনে আগুন দেওয়ার কথা বলেন।

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, দক্ষিণ ঢাকার যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়নের তত্ত্বাবধানে সংগঠনটির কয়েকটি টিম লালবাগের কয়েকজন দাগী সন্ত্রাসীদের দিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন লাগানো হয়। ভিডিও কনফারেন্সে বলা হয়- ট্রেনে কে আগুন লাগাবেন? কনফারেন্সে থাকা ১০-১২ জনের একজন বলেন তিনি আগুন লাগাতে পারবেন।

ট্রেনে আগুন দিতে সম্মত হওয়ার ব্যক্তিটি কে, তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে জানান ডিবি প্রধান। তিনি বলেন, ওই ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেওয়া আরও তিন ব্যক্তি আগুন লাগাতে পারবেন বলে জানিয়েছিলেন। তারা ২০১৩-১৪ সালে বিভিন্ন এলাকায় বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করেছিল। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রাবাড়ী আশপাশের এলাকায় এলে আগুন দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার ৮ জন
ডিবি জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যানবাহনে আগুন দেওয়া, প্রার্থীদের অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্পকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, ভোটকেন্দ্রে অথবা তার আশপাশে হাত বোমা নিক্ষেপ করে ভোটারদেরকে আতঙ্কিত করা, প্রচারপত্র বিলি করার কাজসহ গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিতে আগুন দেওয়ার অন্যতম পরিকল্পনাকারী এবং জনবল দাতা কাজী মনসুর আলম এবং বিএনপির পক্ষে আশ্রয় এবং অর্থ দাতা নবীউল্লাহ নবীসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে ডিবি লালবাগ এবং ওয়ারী বিভাগ। গ্রেপ্তার অন্যান্যরা হলেন- মো. ইকবাল হোসেন স্বপন, মো. রাসেল, দেলোয়ার হাকিম বিপ্লব, মো. সালাউদ্দিন, মো. কবির ও মো. হাসান আহমেদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৪
পিএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।