ঢাকা: কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলে, তার মানে দেশে গণতন্ত্র নেই, এটা বোঝায় না বলে মন্তব্য করে আওয়ামী সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের অংশগ্রহণই মূল বিষয়।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে গণভবনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বিবিসির সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বিবিসির সাংবাদিক সামিরা হুসেইন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, ২০১৮ সালের পর আপনি প্রধান বিরোধী দলকে সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করেননি। তাদের অনুপস্থিতিতে গতকালকের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। যেখানে ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়নি। আপনার সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সীমিত করেছে, মানবাধিকার কর্মীরা এমন সমালোচনা করছে। আপনি কি এখনো বিশ্বাস করেন কোনো বিরোধী দল ছাড়া বাংলাদেশে একটি গতিশীল গণতন্ত্র থাকবে?
এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। যদি কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নেয়, তার মানে এটা বোঝায় না সেখানে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে জনগণ অংশ নিয়েছে কি নেয়নি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তারা (বিএনপি-জামায়াত জোট) চেষ্টা করেছে, বাধা দিয়েছে জনগণ যাতে ভোট দিতে না যায়। কিন্তু জনগণ তাদের কথা শোনেনি। কারণ আমাদের জনগণ এখন তাদের অধিকার নিয়ে খুবই সচেতন। ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার।
শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের যদি আলাদা কোনো সংজ্ঞা থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি এটা জনগণের অধিকার। যখন জনগণ অংশগ্রহণ করে, তারা তাদের সরকারের জন্য ভোট দেয়। সুতরাং জনগণের অংশগ্রহণই মূল বিষয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন হয়েছে। তারা চেষ্টা করেছে। কিন্তু বন্ধ করতে পারেনি। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। বিএনপি কত মানুষ মেরেছে, সে প্রশ্ন তিনি করেননি। এটা শুধু এ বছরই নয়। তারা ২০১৪-১৫ সালে একই কাজ করেছিল। ৩ হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে, ৫ শত মারা গেছে। তাদের কীভাবে গণতান্ত্রিক দল বলা যায়? তারা সন্ত্রাসী দল এবং মানুষ তাদের সমর্থন করে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বিবিসি সাংবাদিককে আরও বলেন, আপনি যে দলটির (বিএনপি) কথা বলেছেন, তারা কী করেছে? তারা আগুন দিয়েছে, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে। মাত্র কিছুদিন আগে তারা ট্রেনে আগুন দিয়েছিল এবং নারী-শিশুসহ মানুষ হত্যা করেছে। এটা কি গণতন্ত্র?
শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। কিন্তু যখন সাধারণ মানুষকে হত্যার চেষ্টা করা হয়, শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশে। আমি জানি না এটি কি রাজনীতি। এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। কারোই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা উচিত না। মানুষ এটা গ্রহণ করে না। এটা শুধু একটা ঘটনা নয়। এ ধরনের ঘটনা এ দেশে একাধিকবার ঘটেছে। আমরা ধৈর্য দেখিয়েছি। আমরা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছি।
ভারতের টেলিগ্রাফের সাংবাদিক দেবাদ্বীপ পুরোহিত বলেন, আপনি যখন গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তখন বাংলাদেশে আপনার বিরোধী দলেরও প্রয়োজন হবে। এ ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আপনি কী চান? আপনি কি বলছেন, আমার উচিত একটি বিরোধী দল গঠন করা? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দলকে সংগঠিত করেছি। সুতরাং বিরোধীদেরও তাদের নিজেদের দলকে সংগঠিত করতে হবে। তারা যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আপনি যদি আমাকে বলেন বিরোধী দলের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত করতে। যদি আপনি চান আমরা সেটা করতে পারি। কিন্তু সেটা সত্যিকারের বিরোধী দল হবে না।
পর্যবেক্ষক হিসেবে আসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক শেখ হাসিনাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে কী করবেন?
জবাবে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাওয়া শেখ হাসিনা বলেন, সকল দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই চমৎকার, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও। আমাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। এটি নির্ভর করছে আপনার এবং আপনাদের সরকারের ওপর।
বাংলাদেশের জনগণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জনগণ খুবই চমৎকার। তারা আমার কথা শোনে, যদি আমি তাদের কিছু বলি, কোনো অনুরোধ করি। কিছু বিরোধী আছে, এটা খুবই স্বাভাবিক এটা থাকবেই। আপনারা জানেন আমি প্রতিশোধপরায়ন না, আমি কখনো কারো ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করিনি। আমি খুবই খোলা মনের, আমি খুবই উদার।
আরেক পর্যবেক্ষকের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমি চেষ্টা করি জনগণের জন্য কাজ করতে। আপনি জানেন, একজন নারী একজন মা হিসেবে পুরো পরিবারের দেখাশোনা করে, সন্তানদের দেখাশোনা করে। সুতরাং মায়ের স্নেহ নিয়ে আমি আমার জনগণের দেখাশোনা করি এবং চেষ্টা করি তাদের সহায়তা করতে।
গণভবনের সবুজ লনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের শতাধিক সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হয়। ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ভোট হয় ২৯৯টি আসনে। এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে ২২৩টি আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
গত দুই মেয়াদে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ১১ আসনে জয় পেয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং বিএনপির জোট থেকে বেরিয়ে আসা কল্যাণ পার্টি একটি আসনে জয় পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৪
এমইউএম/এসকে/এমজেএফ