ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নারায়ণগঞ্জে সংরক্ষিত বঙ্গবন্ধুর সেই দুর্লভ চিঠিতে যে বার্তা ছিল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪
নারায়ণগঞ্জে সংরক্ষিত বঙ্গবন্ধুর সেই দুর্লভ চিঠিতে যে বার্তা ছিল

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে পরম যত্নে সংরক্ষিত রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি দুর্লভ চিঠি। সদর উপজেলার ফতুল্লার বক্তাবলীতে ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বরের গণহত্যার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ওই চিঠি পাঠিয়ে সমবেদনা জানিয়েছিলেন।

 
সেই চিঠি এখনও আগলে রেখেছেন গণহত্যায় শহিদ হওয়া একজনের ভাই। তবে এখনও সেই গণহত্যায় শহিদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না মেলায় বিস্তর আক্ষেপও রয়েছে পরিবারটির।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে দেশ যখন বিজয়ের দোরগোড়ায় ঠিক তখনি পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার প্রত্যন্ত অঞ্চল বক্তাবলীর ২২টি পরগণায়। বর্বরোচিত ওই হামলায় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ১৩৯ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়।

২৯ নভেম্বরের নারকীয় গণহত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গে তৎকালীন ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা তমিজউদ্দিন রিজভী বলেছিলেন, তারা মুজিব বাহিনীর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করে বক্তাবলী ও এর আশপাশের গ্রামে অবস্থান নেন। ওই সময়ে বক্তাবলী গ্রামে এক থেকে দেড়শ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। নদীবেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় এলাকাটিকে নিরাপদ মনে করতেন মুক্তিযোদ্ধারা। বক্তাবলীতে অবস্থান করেই মূলত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন করার পরিকল্পনা করতেন।  

ঘটনার দিন ২৯ নভেম্বর ছিল প্রচণ্ড শীত। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল পুরো এলাকা। ভোরের দিকে হঠাৎ করেই পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। উভয়পক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে মুন্সিগঞ্জ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ব্যাটালিয়ন বক্তাবলীতে এসে এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিলে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়।  

পরে তারা একত্রে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা একটানা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা মোক্তারকান্দি কবরস্থানের সামনে কয়েকজন রাজাকারকে ধরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের উপর্যুপরি আক্রমণের মুখে হানাদাররা পিছু হঠতে শুরু করে।  

এসময় তারা রাজাকার, আল বদর, শামস বাহিনীর পরামর্শে ১৩৯ জন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এতে নিহত হন শাহিদ, ফারুক, অহিদ, মনির, শাহ আলম, রহমতউল্যাহ, শামসুল, আলম, সালামত, খন্দকার, সুফিয়া, আম্বিয়া, খোদেজা সহ ১৩৯ জন। পিছু হটার সময় হানাদার বাহিনী পেট্রোল ও গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী পার সংলগ্ন বক্তাবলী পরগনা, রাজাপুর ডিগ্রীর চর, মুক্তাকান্দি, গঙ্গানগর, রাম নগর, গোপাল নগর, রাধানগরসহ ২২টি গ্রাম।

ফতুল্লা গঙ্গানগর এলাকার বাসিন্দা মো. আলী হোসেন (৫২)। স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি তার বড় ভাইকে হারিয়েছেন।  

তিনি জানান, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহিদ পরিবার হিসেবে আমাদের একটি চিঠির মাধ্যমে সমবেদনা জ্ঞাপন করে প্রত্যেক শহিদের জন্য দুই হাজার টাকা ও আহতদের জন্য পাঁচশ টাকা করে অনুদান দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর আর কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। তাই শহিদ পরিবার হিসেবে আমরা আর স্বীকৃতি পাইনি।  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে লেখা হয়েছিল:

প্রিয় ভাই/বোন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার সুযোগ্য পুত্র/পিতা/স্বামী/মা/স্ত্রী আত্মোৎসর্গ করেছেন। আপনাকে আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আপনার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও রইল আমার প্রাণঢালা সহানুভূতি। এমন নিঃস্বার্থ মহান দেশপ্রেমিকের পিতা/পুত্র/স্বামী/স্ত্রী হওয়ার গৌরব লাভ করে সত্যি আপনি ধন্য হয়েছেন। ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’ থেকে আপনার পরিবারের সাহায্যার্থে আপনার সংশ্লিষ্ট মহকুমা প্রশাসকের নিকট ২ হাজার টাকার চেক প্রেরিত হল। চেক নম্বর সিএ ০০৫১৬। আমার প্রাণভরা ভালবাসা ও শুভেচ্ছা নিন। ইতি-শেখ মুজিব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪
এমআরপি/এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।