ঢাকা: মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের সাহসী ও গৌরবময় অবদান স্মরণে রাজধানীতে ফরেন সার্ভিস ডে উদযাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) এ উপলক্ষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল কলকাতায় বাংলাদেশের প্রথম কূটনৈতিক মিশন স্থাপন করা হয়। সে সময় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের প্রতি কলকাতা মিশনের কর্মকর্তারা যে আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন, তা অকুণ্ঠ চিত্তে স্মরণ করছি। দিনটি আমাদের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ফরেন সার্ভিস ডে উপলক্ষে মরিয়াম চৌধুরী স্মৃতি তহবিল চালু করা হয়েছে। এ তহবিল থেকে প্রতি বছর অনুদান দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব ড. নজরুল ইসলাম বলেন, আজ থেকে ৫৩ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতা মিশনে কূটনীতিকরা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। সে সময় তারা পাকিস্তানের মিশন দখলে নিয়েছিলেন। আজ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সে সময় কূটনীতিকরা পাকিস্তানিদের বর্বরতা তুলে ধরেন। তাদের সেই অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশনের (ফোসা) সভাপতি ফাহমিদা সোমা জাবিন বলেন, আজকের এ দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করতে চাই। তার ডাকেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে কূটনীতিকরা স্বাধীনতার জন্য বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। সেই ভূমিকা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। একজন কূটনীতিকের স্ত্রী হিসেবে ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তাদের অনেক চ্যালেঞ্জ দেখেছি। দূর থেকে কূটনৈতিক জীবন আকর্ষণীয় হলেও এখানে পরিবারের জন্য অনেক ত্যাগ করতে হয়।
অনুষ্ঠানে মরিয়াম চৌধুরী স্মৃতি তহবিল থেকে কূটনীতিকদের সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধের বই উপহার দেওয়া হয়। এ ছাড়া ফরেন সার্ভিস ডে উপলক্ষে একটি কেক কাটা হয়।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের সাহসী ও গৌরবময় অবদানের স্মরণে ২০১২ সাল থেকে ১৮ এপ্রিলকে ফরেন সার্ভিস ডে হিসেবে পালন করা হয়। মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশপূর্বক এবং দখলদার পাকিস্তান সরকারকে ত্যাগ করে ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল কলকাতায় তৎকালীন পাকিস্তান ডেপুটি হাইকমিশনের বাংলাদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসকর্মীরা পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে তদানীন্তন বিভিন্ন পাকিস্তানি দূতাবাসে কর্মরত বাংলাদেশি কূটনীতিকরা পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনপূর্বক মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ফ্রন্টকে বেগবান করেন। রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা যখন সম্মুখ সমরে লিপ্ত, তখন বাংলাদেশি কূটনীতিকরা বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পক্ষে প্রচারণা ও জনমত গঠনের কাজ শুরু করেন এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কর্মকাণ্ড বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়ে একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
টিআর/আরএইচ