ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অধিগ্রহণ জটিলতায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না ৩৫ কোটি টাকার সেতু!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
অধিগ্রহণ জটিলতায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না ৩৫ কোটি টাকার সেতু!

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরীর কালীগঙ্গা নদীর ওপর প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি সংযোগ সড়কবিহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ফলে সেতুটি কাজে আসছে না।

দুই পারের কয়েক হাজার মানুষকে নৌকায় করেই প্রতিদিন নদী পার হতে হচ্ছে।

সিআইবিআরআর প্রকল্পের আওতায় ৬৩০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর অধিগ্রহণের জন্য ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ জমি নির্ধারণ করে। এদিকে ৭ দফার কাজ শেষ। এখন চূড়ান্ত দফার কাজ চলছে, যে কোনো সময় জমির মালিকরা চেক পাবেন- এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নে কালীগঙ্গা নদীর ওপর ৬৩০ মিটার সেতুর কাজ পায় অরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স এবং মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। দরপত্র অনুযায়ী সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি। পরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ করার কথা ছিল। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এবং অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হলেও ভূমি অধিগ্রহণ আর স্থাপনার ক্ষতি পূরণের টাকা দুই বছরেও বুঝে পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। সেতুটির দুই পাশের প্রবেশপথের (অ্যাপ্রোচ রোড) জন্য আশাপুর, চরমির্জাপুর, বৈকুণ্ঠপুর, নিন্দাপাড়া ও পূর্ব উথুলী মৌজা থেকে ভূমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জমি অধিগ্রহণে একটু সময় লেগে গেছে, তবে সর্বশেষ ও চূড়ান্তভাবে কাজ চলছে বর্তমানে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে জমির মালিকরা তাদের জমির মূল্য পেয়ে যাবেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলার ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর এলাকার কালীগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির অবকাঠামো শেষ হলেও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে গেছে। মাঝে এক বছর আগে সেতুটির এক পাশে জমির মালিকের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই বালু ফেলেন ঠিকাদারের লোকজন। পরে জমির মালিকদের বাঁধায় ঠিকাদার আর কোনো কাজ না করেই লাপাত্তা হয়ে যান। সরকারের অতিরিক্ত কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে শুধু ভুল ডিজাইনে সেতুটি নির্মাণের জন্য। এ সেতুটির অ্যাপ্রোচ সড়কটি যেখান দিয়ে যাচ্ছে, তার ঠিক কয়েক মিটার দূরেই রয়েছে ২৫ ফুট প্রশস্ত এলজিইডির রাস্তা। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু লোকজনের সুবিধার জন্য সেতুটি এ জায়গা দিয়ে করা হয়েছে।  

ভূমি অধিগ্রহণের জমির টাকা এখনো পাননি সোবহান মিয়া নামে এক কৃষক। তিনি বলেন, আর এস দাগ ২২৪, আর এস খতিয়ান নম্বর ১৯,৭৪ এ দাগে আমাদের তিনজনের জমি আছে, শুনেছি আমাদের এ জায়গার ওপর দিয়ে রাস্তা যাবে। কিন্তু এখনো কোনো টাকা পয়সা পাইনি। তবে আমার চাচা বলেছেন, মাস খানেকের মধ্যে নাকি তারা টাকা পাবেন।  

পাশের ২২৫ আর এস খতিয়ানের ৫৯ দাগের মালিক শাহজাহান বলেন, সেতুর গোড়ার জমিটাই আমার, অনেক দিন আগে ঠিকাদারের লোকজন এসে বলল, আমাদের রাস্তা তৈরি করতে দেন, পরে আপনারা টাকা পাবেন। স্থানীয় মুরুব্বি ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বললে তারা তখন বলেন, জমি অধিগ্রহণের টাকা হাতে পাওয়ার পরই জমি ছেড়ে দিও, তাদের (ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান) কাজকর্ম খুব একটা সুবিধাজনক না।  

সেতুটির নিচে কথা হয় আব্দুস সামাদ মিস্ত্রির সঙ্গে। তিনি বলেন, ২১০ আর এস দাগ ১১,১৬ খতিয়ানের ১৫ শতাংশ জমি সেতুর নিচে পড়ছে। যখন সেতুটি করে, তখন বলছে জায়গা দেন, টাকা পাবেন। এখন বলে আপনারা টাকা পাবেন না।

মিজান নামে এক পথচারী বলেন, সেতুটি হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। কিন্তু অ্যাপ্রোচ সড়ক না থাকায় এখনো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। সেতুটি আগে অন্য জায়গায় হওয়ার খাত ছিল। ওই স্থানে হলে এতোদিন অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকত না।  

আব্দুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি প্রতিদিন এ কালীগঙ্গা নদী পার হয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাই। অ্যাপ্রোচ সড়ক বানিয়ে সেতুটি দ্রুত ব্যবহারের উপযোগী করা হোক।  

অরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স এবং মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মাসুদ মিয়া বলেন, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা গত বছর ডিজাইন অনুসারে সেতুর গোড়ায় মাটি ভরাট করতে গিয়ে জমির মালিকদের বাঁধার মুখে পড়েছি। অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ হয়ে গেলে পাঁচ/ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।

ঘিওর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় (এলজিইডি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সেতুটির অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য নির্বাচিত জমি অধিগ্রহণ করার বিষয়ে কাজ চলছে। আশা করছি, এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে জমির মালিকরা তাদের প্রাপ্য টাকা বুঝে পাবেন।  

সরকারের এতো টাকা খরচ হচ্ছে অথচ অ্যাপ্রোচ সড়ক করতে, অথচ কয়েক মিটার পাশেই এলজিইডির রাস্তা রয়েছে, কেন ওই সড়ক অ্যাপ্রোচ সড়ক হিসেবে রেখে সেতুটির ডিজাইন করা হলো না-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই সময় আমি এখানে কর্মরত ছিলাম না, তবে সেতুটি করার আগে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই করা হয়েছে। যদিও নদীতে এখন পানি নেই। নদীর গতি পথসহ সব কিছু মাথায় রেখেই সেতুটির ডিজাইন করা হয়েছে।  

জেলার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি ) এল এ শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার মামুনুর রশিদ বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের বিষয় এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। তবে বিস্তারিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।