খাগড়াছড়ি: জেলার প্রাচীন মহকুমা শহর রামগড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। অথচ শুধু একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
ব্যবস্থাপত্র পেলেও ওষুধ কিনতে হয় বাইরে থেকে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে নার্স থেকে টেকনেশিয়ান সংকটের সঙ্গে নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি। ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্থানীয়দের দূরে যেতে হয় চিকিৎসা নিতে।
জানা গেছে, ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। উলটো ৩১ শয্যার কাঠামোতে যে জনবল থাকার কথা তাও নেই। বিশেষজ্ঞসহ ১৩টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে চিকিৎসা দিচ্ছেন একজন। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে দুইজনকে সংযুক্তি করা হলেও একজন যোগদান করেননি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে সার্জারি, গাইনি, অ্যানেস্থেসিয়া, মেডিসিন, বিভাগে একজন করে জুনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এছাড়া ডেন্টাল, অর্থোপেডিক, চর্ম ও যৌন বিভাগ, মেডিকেল অফিসার (ইওসি), মেডিকেল অফিসার (আইএমও) ও মেডিকেল অফিসার (এমএমসি) পদগুলো শূন্য।
প্রসূতি মায়েদের জন্য চারজন মিডওয়াইফ এর চারটি পদ থাকলেও একজনও নেই। ফলে প্রসূতিসেবা থেকেও বঞ্চিত এই এলাকার জনগণ। নার্সের পদ আছে ৩২টি। তবে কাগজে কলমে ১৭ জন নার্স থাকলেও বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন আটজন। বাকি নয়জন বিভিন্ন জায়গায় সংযুক্তিতে আছেন। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থেকে শুরু করে পুষ্টিবিদ ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিসহ ১২৭ জনের পদ থাকলেও আছে মাত্র ৬৪ জন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি হওয়া আব্দুস সাত্তার জানান, পেটের ব্যথা নিয়ে এ পর্যন্ত তিনবার ভর্তি হয়েছেন তিনি। কিন্তু তেমন চিকিৎসাসেবা পাননি। কেন তার ব্যথা হচ্ছে তাও কেউ বলতে পারছেন না। ডাক্তার তাকে চট্টগ্রাম বা ফেনীতে গিয়ে চিকিৎসা করাতে বলেন। কিন্তু দিনমজুর আব্দুস সাত্তারের পক্ষে বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই।
আকবর হোসেন নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ফটিকছড়ি উপজেলার একটা অংশ রামগড় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া আর কোনো সেবা পাওয়া যায় না। ডাক্তার সংকট, কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না। তাই যাদের সামর্থ্য আছে তারা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এই সংকট দূর করা প্রয়োজন।
রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্তিতে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন আউটডোরে ২০০ জনের ওপরে রোগী হয়। ইনডোরে প্রায় ৫০ জনের বেশি ভর্তি থাকেন আর ইর্মাজেন্সিতে প্রায় ৫০ জনের মতো রোগী আসেন। আমিসহ দুইজন চিকিৎসক সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়।
রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ বি এম মোজাম্মেল হক জানান, আমাদের ৩১ শয্যার লোকবলও নেই। অথচ কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা। আমরা ৫০ বেডের প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাবে।
স্থানীয়দের দাবি সরকার যেন অচিরেই এই গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় পদে জনবল পদায়ন করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৪
এডি/এফআর