ঢাকা, শনিবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

চাঁপাইনবাবঞ্জে জোড়া খুন: মূল আসামিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৪
চাঁপাইনবাবঞ্জে জোড়া খুন: মূল আসামিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাঞ্চল্যকর আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালামসহ জোড়া খুনের পর ৬ দিন অতিবাহিত হলেও হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।  

মাত্র ৫-৭ মিনিটের ওই কিলিং মিশনে ব্যবহার করা হয় বোমা, চাইনিজ কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্র।

সন্ত্রাসীরা একটি চাইনিজ কুড়াল ফেলে যাওয়ায় সেটি ছাড়া আর কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এমনকি কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীরাও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ বলছে মামলার পর আসামিদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে সর্বত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার রাণীহাটি কলেজ মোড় সংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের খোলামাঠে খুন হন নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম ও তার সহযোগী হরিণগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মতিন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ককটেল বিস্ফোরণ, গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় সালাম ও মতিনকে। জেলায় এর আগের হত্যাকাণ্ডে একসঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা ও ধারাল অস্ত্র ব্যবহারের নজির খুব একটা নেই। এবারই বোমার পাশাপাশি গুলি ও ধারাল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘটনায় সময় আশপাশে অবস্থান করা ব্যক্তিরা জানান, ৫-৭ মিনিটের মধ্যেই বোমা ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি ও গুলি করে দুজনকে হত্যা করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এর আগে বোমা হামলায় গুরুতর জখম হয়ে মাটিতে পড়ে যান তারা। ওই সময় ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায় বলেও জানান তারা। সন্ত্রাসীরা হামলার সময় একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন ধারণা তাদের। কিন্তু ঘটনার ৬ দিনেও ওই সব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীদেরও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

নয়ালাভাঙ্গা এলাকার এক স্কুল শিক্ষক বলেন, আগেও এ এলাকায় অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কিন্তু এবারের মতো এত গুলির শব্দ শোনা যায়নি। সালাম ও মতিনকে গুলি করে হত্যার পর এলাকায় নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ধারণা এ এলাকায় শুধু ককটেল ও বোমার মজুদ ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এ এলাকায় অনেক আগ্নেয়াস্ত্রেরও মজুদ রয়েছে। যা ভবিষ্যতের জন্য চরম অশনি সংকেত।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতলে আব্দুল মতিনকে চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসক ডা. মিম ইফতেখার জানান, হামলাকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করতেই একাধিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। মতিনের ইনজুরির পরিমাণ এত বেশি ছিল যে তাকে মাত্র ১০ কিলোমিটার আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। তার মাথা ও পায়ে একাধিক গুলির চিহ্ন ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে আনার পথেই তার মৃত্যু হয়। এছাড়া আহতদের শরীরেও গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

আব্দুস সালাম হত্যা মামলার বাদী ফেরদৌসী বেগম জানান, হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করেই মামলা দায়ের করেছেন তিনি। কিস্তু প্রধান আসামির স্ত্রী এবং আরও ৫ জন ছাড়া যারা হামলায় যুক্ত তাদের কাউকেই আটক করতে পারেনি পুলিশ। এতে করে তিনি বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে বাস করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যেই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, ওই হত্যা মামলায় নতুন করে কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে পুলিশ আসামিদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। ঘটনার পর আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহা. নূরুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তৎপর আছে। তবে এখনো হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। আমরা অস্ত্র উদ্ধার ও আসামি ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, আসামিরা আত্নগোপনে চলে যাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তারে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। ঘটনার মাত্র ১ দিনের মাথায় ২ জন এবং ২ দিনের মাথায় আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত এ মামলার একটি সন্তোষজনক অগ্রগতি এলাকাবাসী দেখতে পাবেন।

গত ২৭ জুন রাতে আধিপাত্য বিস্তারের জেরে প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় প্রাণ হারান আওয়ামী লীগ নেতা আ. সালাম ও তার সহযোগী আ. মতিন। এ ঘটনায় আহত হন সালামের আরও ২ সহযোগী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।