লক্ষ্মীপুর: গত ২০ জুলাই শুক্রবার কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয় কসমেটিকস দোকানের কর্মচারী মো. ইউনুছ আলী শাওন (১৭)। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
পরে শাওনের কথামতো তার বাবা আবুল বাশারকে কল করে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানানো হয়। ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে তার মাথায়। চিৎকার দিয়ে তিনি লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। পরে সবাই ছুটে এসে ওই মোবাইল নম্বরে কল করে জানতে পারেন শাওন আর নেই।
কিশোর শাওনের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাগুরী গ্রামে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, শাওন ঢাকার শনির আখড়া এলাকার একটি কসমেটিকস দোকানের কর্মচারী ছিল। পরিবারের হাল ধরতে ঘর ছেড়ে রাজধানীতে পাড়ি জমায় শাওন। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন দুপুরে শাওন দোকান বন্ধ করে খাবার খেতে বাসায় যাচ্ছিল।
দোকানের বাইরে আসার পরপরই দুটি গুলি এসে শাওনের বুকে ও পেটে লাগে। বুকের গুলিটি শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যায়। শাওন লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। পরে উপস্থিত লোকজন এসে শাওনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাওনের ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন ২১ জুলাই মরদেহ বুঝে পান পরিবারের লোকজন। পরে ২২ জুলাই রোববার সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জানা যায়, শাওনের বাবা আবুল বাশার একজন দরিদ্র কৃষক। তার দ্বিতীয় স্ত্রী কুলছুমের ঘরে জন্ম শাওনের। ঘর ছাড়া সহায়-সম্বল বলতে তেমন আর কিছু নেই আবুল বাশারের। গ্রামের রাস্তার দুইপাশে সবজি চাষ করে এবং অন্যের এক খণ্ড জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন তিনি। শাওনের পাঠানো অর্থ দিয়েই চলত সংসার।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগেও শাওনদের বসতঘর ছিল না। গ্রামের লোকজনের সহযোগিতায় একটি টিনশেড ঘর তৈরি করে দেওয়া হয় তাদের। অভাব-অনটন যেন পরিবারটির নিত্য সঙ্গী।
তারা জানান, অভাবের কারণে শাওনের লেখাপড়া করা হয়নি। গ্রামের একটি মাদরাসা থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ফুফাতো বোনের জামাইয়ের সঙ্গে চলে যায় ঢাকায়। রাজধানীর শনির আখড়া এলাকায় কসমেটিকস দোকানে সেলসম্যানের চাকরি নেয় শাওন। থাকা-খাওয়া ছিল ওই আত্মীয়ের বাসায়। মাসিক বেতন ছিল পাঁচ হাজার টাকা। বেতনের এ অর্থই ছিল তার পরিবারের একমাত্র অবলম্বন।
উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাবা আবুল বাশার এখন শোকাহত। কিশোর ছেলেটি একদিন বড় হবে, সংসারের দুঃখ ঘোচাবে, সে আশায় ছিলেন বাবা।
ছেলের কবরের পাশে গিয়ে আবুল বাশার বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘ওরে আমার বুকের মানিককে কেড়ে নিলোরে। আমি কী করে বাঁচুম? আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? তোরা আমার মানিকরে ফিরিয়ে দে-রে, আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে’।
একমাত্র ছেলে শাওন নিহত হওয়ার পর থেকেই নির্বাক কুলছুম বেগম। কারও সঙ্গেই তেমন কথা-বার্তা বলছেন না। নিয়মিত খাবারও খাচ্ছেন না তিনি। কান্না করছেন আর নামাজের বিছানায় বসে ছেলের জন্য দোয়া করছেন।
গ্রামের লোকজন জানান, শাওন ছিল শান্ত স্বভাবের ছেলে। তার বাবা কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। নিজের কাজ নিয়েই পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত থাকতেন। শাওনের অকাল মৃত্যুতে পুরো গ্রামের শোক নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২৪
এসএম