দিনাজপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ মিছিলে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল ও লোহার রড নিয়ে হামলা এবং ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলীসহ ২৪ জন নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) মধ্যরাতে থানায় গিয়ে বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলী।
শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে চেয়ারম্যান আফসার আলীকে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
আফসার আলী বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। এবারই প্রথম তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।
বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক মোহাম্মদ রাসেল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওসি বলেন, রাতে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। পরে শিক্ষার্থীদের দায়ের করা মামলায় চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট ক্ষমতা পরিবর্তনের পর স্বপরিবারে আত্মগোপনে চলে যান বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলী। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বোচাগঞ্জ থানায় আসেন বাড়ি ভাঙচুরের মামলা দায়ের করতে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে ছিল। আফসার আলী থানায় এলে শিক্ষার্থীদের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আফসার আলী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হলে সেখানে স্লোগান দিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মুহূর্তের মধ্যেই আশপাশে থেকে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ থানায় চলে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা চেয়ারম্যানের পদ থেকে আফসার আলীর পদত্যাগের দাবি তুলেন। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন আফসার আলী। এ সময় তিনি লিখিতভাবে পদত্যাগ করবেন বলেও জানান।
রাতেই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষে থানায় মামলা দায়ের করেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল মোস্তাক।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জুলাই দুপুর প্রায় সাড়ে ১২ টার দিকে সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে। মিছিলটি সেতাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলীর নির্দেশে আসামিরা মিছিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল, লোহার রড নিয়ে মিছিলে অতর্কিত হামলা চালায়। মারপিট করার পাশাপাশি ছাত্রীদের পরিধেয় পোশাক টেনেহিঁচড়ে শ্লীলতাহানি ঘটায়। এ সময় আসামিরা হত্যা ও গুম করে ফেলার হুমকি দেন। তাদের হুমকি-ধামকিতে শিক্ষার্থীরা আত্মগোপন করার কারণে সরকারিভাবে কোন চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেনি।
এ মামলায় সাবেক নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আসামি করা হয়েছে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব আব্দুল বাশার, কাউসার, আব্দুস সবুর, ঈশান ইসলাম, শাহ জাহান, বাপ্পি সরকার, সিমন ইসলাম, নাসিরুল ইসলাম নয়ন, লিয়ন ইসলাম, মেহেদি হোসেন, রিয়াদ হোসেন, নাঈম ইসলাম, শাহ নেওয়াজ সৌরভ, আশরাফুল ইসলাম আকাশ, ছুটি, শাওন ইসলাম হৃত্তিক হোসেন, সমুদ্র ইসলাম, সোহেল রানা, আশরাফ আলী তুহিন, আরাফাত হোসেন জনি, জাহাঙ্গীর আলম লিটনসহ আরও৫ জনকে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৪
এসএএইচ