মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার একটি জনপদ ঘিরে দীর্ঘ ১৫ বছর পর ফিরে এসেছে শান্তি ও স্বস্তি। ওই উপজেলার ঝিমাই খাসিয়াপুঞ্জির একমাত্র পথটি গাড়ি চলাচলের জন্য এতো দিন ধরে অবরুদ্ধ ছিল।
উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে বাগান কর্তৃপক্ষ ও খাসিয়া জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনাক্রমে ওই চলাচলের রাস্তাটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাগানের অভ্যন্তরের রাস্তা দিয়ে পুঞ্জির লোকজন গাড়ি দিয়ে চলাচল করতে পারবে।
ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান রানা সুরং পুঞ্জির লোকদের সঙ্গে নিয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দিন ও সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আদনানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঝিমাই চা-বাগান কর্তৃক রাস্তায় গাড়ি চলাচলের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনা করেন। পরে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আদনানের নেতৃত্বে সেনা সদস্যের একটি দল ঝিমাই চা বাগান ও ঝিমাইপুঞ্জি পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে পাহাড়ের ভেতরে অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ঝিমাই পুঞ্জির লোকজন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে পারতো না ঝিমাই চা-বাগানের অভ্যন্তরের রাস্তা দিয়ে। বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই রাস্তার মধ্যখানে ফটক দিয়ে রাখে এবং সর্বসাধারণের গাড়ি নিয়ে চলাচল বন্ধ রাখে। সেই ফটক দিয়ে পুঞ্জির লোকজন, শিক্ষার্থীরা গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে পারতেন না। যার কারণে ওই ফটক থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে তাদের পুঞ্জিতে যাতায়াত করতে হত।
ইতোমধ্যে রাস্তা চলাচলে প্রতিবন্ধকতাসহ খাসিয়াদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ঝিমাই পুঞ্জিতে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ডাক্তার কামাল উদ্দিন সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন। এর আগেও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল, ডাক্তার মিজানুর রহমানসহ দেশের সুশীল সমাজের অনেকেই পরিদর্শনে আসেন। তারা পুঞ্জির লোকদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে কথা বলেন।
ঝিমাই পুঞ্জির হেডম্যান (পুঞ্জিপ্রধান) রানা সুরং বলেন, ঝিমাই পুঞ্জিতে বংশ পরম্পরায় আমরা বসবাস করছি। জীবিকার একমাত্র মাধ্যম পান চাষ করে আমাদের সংসার চলে। প্রায় ৮০টি পরিবারে অন্তত ৪ শতাধিক মানুষের বসবাস এই পুঞ্জিতে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কারণে পুঞ্জির লোকজন গাড়ি নিয়ে চলাচলে অনেক ভোগান্তিতে ছিল। যার কারণে পুঞ্জি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে বাগানের ফটক থেকে পায়ে হেঁটে পুঞ্জিতে আসতে হয়। এছাড়া আমাদের পুঞ্জি থেকে অনেক পান ব্যবসায়ীরা পান পরিবহন করতে বাড়তি খরচসহ অনেক কষ্ট করতে হত। চলমান পরিস্থিতিতে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানালে তাদের হস্তক্ষেপে চলাচলের রাস্তাটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সেজন্য উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এ পুঞ্জিপ্রধান আরও বলেন, আমরা চা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে মানবিক আবেদন জানাচ্ছি যে, আমাদের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে আরো কিছু সময় দিলে আমরা পুঞ্জিবাসী অনেক উপকৃত হব।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৪
বিবিবি/এসএএইচ