সিলেট: ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া কমপ্লেক্সে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সিলেটে নাগরিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য এ দেশের ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যমে হামলা সেই লক্ষ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু এমন আঘাত রাষ্ট্র সংস্কার বা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ’
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মুখে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গত ১৯ আগস্ট ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া কমপ্লেক্সে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি আয়োজন করে সিলেটের সাংবাদিক সমাজ।
বিক্ষোভ সমাবেশে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘হামলার ঘটনা শোনার পর থেকে আমি হতবাক এবং ক্ষুব্ধ। দেশে একটা এরকম সরকার থাকা অবস্থায়ও কীভাবে গণমাধ্যমের ওপর হামলা হয়। ’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম জাতির বিবেক, তারা আমাদের সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না তারা তুলে ধরে। আমি ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এবং সিলেটের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ’
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে অতি দ্রুত এসব দুর্বৃত্তদের ধরে বিচারের আওতায় না আনুন। না হলে আবারও আঘাত আসবে, হয়ত আগামী সপ্তাহে আবারও আমাদের এভাবে রাজপথে দাঁড়াতে হবে। ’
সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয়েছি মনে হয় আমরা সাংবাদিকরা। এখন পর্যন্ত নয়টি টেলিভিশন এবং বেশ কিছু পত্রিকা অফিসে হামলা হয়েছে। এই অবস্থা চলতে পারে না। ’
ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া কমপ্লেক্সে হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, নতুন সরকার বাংলাদেশের আগামী দিনগুলোতে আমরা যারা সাংবাদিক আছি আমরা যেন স্বাধীনভাবে যেন কাজ করতে পারি সে পরিবেশ নিশ্চিত করবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের সকলের প্রতি আমি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি- আমাদের সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আপনারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ’
তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতার ঘোষণা দেন।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র-শিক্ষক-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে তার অন্যতম দাবি ছিল-গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের ও মত ধারণের স্বাধীনতা। অথচ ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া কমপ্লেক্সে সাতটি গণমাধ্যম অফিসে হামলার পাশাপাশি সম্প্রতি বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে হামলার ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এরপর জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে-আদৌ সে দাবি কতটুকু বাস্তবায়ন হবে। ’
তিনি সরকারের কাছে দাবি রেখে বলেন, ‘সাংবাদিকদের অধিকার, ভিন্নমত ধারণের অধিকারের উপর যে আঘাত এসেছে এটা তারা দ্রুত একটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় যাবেন। প্রকৃত অপরাধীদের ধরবেন-আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তি বাস্তবায়ন করবেন। ’
তিনি বলেন, ‘সবাই অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। এমন চলতে থাকলে সেই বিষয়টি ম্লান হয়ে যাবে। এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্র সংস্কার বা নতুন বাংলাদেশের যে লক্ষ্য সেটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমি সিলেট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আজকের এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। ’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘পরিবর্তন আনতে হলে গণমাধ্যমকে স্বাধীন রাখতে হবে। গণমাধ্যমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনোভাবে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। যে হামলা হয়েছে তার আমরা নিন্দা জানাই। ’
তিনি আরো বলেন, ‘কারো ওপর অভিযোগ থাকলে আইনগতভাবে সেটা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এভাবে গুন্ডামি করে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এসব কার্যকলাপ যারা করছেন তাদের অবিলম্বে নিভৃত করুন। ’ তিনি কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আল আজাদ, ইলেকট্রনিক জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা) সভাপতি সজল ছত্রী, সিলেট প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি এম এ হান্নান, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইউসুফ আলী, সাবেক সভাপতি আশরাফুল আলম নাসির, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক কমিশনের সভাপতি ফয়সল আহমদ বাবলু, দৈনিক সিলেটের ডাকের ক্রীড়া সম্পাদক বদরুদ্দোজা বদর, খবরের কাগজের সিলেট ব্যুরো প্রধান উজ্জ্বল মেহদী, দৈনিক জৈন্তাবার্তার নির্বাহী সম্পাদক ফয়সল আলম, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যুরো প্রধান শাহ দিদার আলম নবেল, কালের কণ্ঠ সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক ইয়াহইয়া ফজল, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মো. নাসির উদ্দিন, দিনকালের সিলেট ব্যুরো প্রধান মহসিন আহমদ, কালের কণ্ঠ সিলেট অফিসের আলোকচিত্র সাংবাদিক আশকার আমিন রাব্বি, সাংবাদিক রবি কিরণ সিংহ রাজেশ, সিলেট প্রেসক্লাবের সহ সাধারণ সম্পাদক শোয়াইবুল হাসান, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোকচিত্র সাংবাদিক সেলিম আহমদ, সাংবাদিক নাজমুল কবীর পাভেল, সাংবাদিক, এনামুল কবীর, রণজিৎ সিংহ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৪
এনইউ/এসএএইচ