কিশোরগঞ্জ: দুর্গাপূজা উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট বসেছে। হাটে ভিড় করছেন দর্শণার্থীসহ ঢাকিদল নিতে আসা দুর্গাপূজা আয়োজনকারীরা।
কটিয়াদী পৌর এলাকার প্রেসক্লাব সংলগ্ন পুরাতন বাজারে প্রতিবছর দুর্গাপূজা শুরুর আগের দুই দিন মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়ে বুধবার (৯ অক্টোবর) পর্যন্ত এই ঢাকের হাট চলবে।
এবার ঐতিহ্যবাহী কটিয়াদীর ঢাকের হাটে ৫০ থেকে ৬০টি দল এসেছে। দলে আসা বাদকরা ঢোল, কাঁসর, সানাই, নানা বাঁশি, করতাল ও খঞ্জরি নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাজনা বাজিয়ে নেচে গেয়ে পূজারীদের মন আকৃষ্ট করছেন। ঢাকি দলের দাম উঠে ৩০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার ওপরে। পরে পছন্দ হলে টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঢাকির দল চলে যাচ্ছে আয়োজনকারীদের পূজা মণ্ডপে।
জানা যায়, কটিয়াদী উপজেলার চারিপাড়া গ্রামে ছিল সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায়ের রাজার প্রাসাদ। ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় তার রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজা নবরঙ্গ রায় সেরা ঢাকিদের সন্ধান করতে ঢাকার বিক্রমপুর পরগনার বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বার্তা পাঠান। সেই আমন্ত্রণে তখন নৌপথে অসংখ্য ঢাকি দল পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাটে সমবেত হতেন। রাজা নবরঙ্গ রায় নিজে দাঁড়িয়ে একে একে ঢাকের বাজনা শুনে সেরা দলটি বেছে নিতেন এবং পুরস্কৃত করতেন। সেই থেকেই যাত্রাঘাটে ঢাকের হাটের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ঢাকের হাট স্থানান্তরিত হয় কটিয়াদীর পুরান বাজারে। হাটটি জেলার ইতিহাস–ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে।
হাটের আয়োজকরা জানান, ঢাকের হাট থেকে পছন্দের বাদক দলটি নিতে স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পূজারিরা এসেছেন। টাকার বিনিময়ে চুক্তি বদ্ধ হয়ে অনেক বাদক দল চলে গেছে।
কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদুজ্জামান ও কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট পরিদর্শন করেছেন।
তারা জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে জমে উঠেছে প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী দেশের একমাত্র ঢাকের হাট। ঢাকিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ কাজ করছে। শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে হাট চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২৪
এসএম