বরগুনা: সৌদি আরবে পাড়ি জমানোর মাত্র তিনদিন পরই মো. বায়েজিদ হাওলাদার (৪০) নামে এক যুবক মৃত্যুবরণ করেছেন। অর্থাভাবে মরদেহ দেশে আনতে পারছেন পরিবার।
বায়েজিদের মৃত্যু খবরটি নিশ্চিত করেছেন সৌদি প্রবাসী এবং পাশের রুমের থাকা কবির নামে এক যুবক। মরদেহটি বর্তমানে রিয়াদের একটি হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে বলে জানান তিনি।
বায়েজিদ বরগুনার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের মো. ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে।
জানা গেছে, পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে ঋণ করে কাজের সন্ধানে গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাড়েন বায়েজিদ। সৌদি পৌঁছানোর তিন দিনের মাথায় রোববার (২০ অক্টোবর) রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে সোমবার সকালে বায়েজিদের পাশের রুমের বাসিন্দা পটুয়াখালীর মহিপুরের প্রবাসী কবির নামে একজন বায়েজিদের মৃত্যুর সংবাদ পরিবারকে জানায়। একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যক্তি বায়েজিদের মৃত্যুর খবর শোনার পর পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বায়েজিদের পরিবারে বৃদ্ধ মা রাহিমা বেগম, স্ত্রী শিমু বেগম আর আট বছরের ফেরদৌস নামে এক ছেলে রয়েছে। ছোট ভাই ওবায়দুল সে মানসিক ভারসাম্যহীন। বাবা ইউনুছ হাওলাদার প্রায় ১০ বছর আগে মারা যান। মা রাহিমা বেগম বৃদ্ধ শয্যাশায়ী।
বায়েজিদের বসত বাড়ি ছাড়া জমি বলতে কিছু নেই। দিনমজুরির কাজ কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। পরিবারের স্বচ্ছতা ফেরাতে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে চড়া সুদ আর ধার দেনা করে এবং আরডিএফ নামের একটি এনজিও থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ করে ছয় লাখ টাকা খরচ করে সৌদি যান বায়েজিদ।
স্ত্রী শিমু বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, স্বামীই ছিল একমাত্র ভরসা। আমাদের সুখের জন্য সৌদি আরব গিয়ে মারা গেছে। এখন আমাদের কি হবে। কীভাবে চলবো। কি খাবো। কি দিয়ে মানুষের দেনা দেনা পরিশোধ করবো। লাশটাই বা কীভাবে দেশে আনবো।
আমার স্বামীকে দেশে এনে দেন। স্বামীর মুখটা একটু দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, একদিকে স্বামীর মরদেহ আনতে অর্থের প্রয়োজন। অন্যদিকে পরিবারের ঋণের বোঝা এবং একটি নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। সরকার এবং সমাজের বিত্তবান সহৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে স্বামীর মরদেহটা দেশে আনা সম্ভব।
অসুস্থ শরীর নিয়ে বায়েজিদের বৃদ্ধা মা রাহিমা বেগম শুয়ে আছেন বিছানায়। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই হাউ মাই করে কেঁদে কেঁদে বলেন, বাবা মোরে তো দেহার আর কেউ রইলো না। আল্লাহ মোরে না নিয়া কিরলইগ্যা মোর পোলাডারে নিলো। মুই বিছানায় মৃত্যুর অবস্থায় আছি এহন কে মোরে ওষুধ কিনে দেবে। কেডায় আমার ভাত খাওয়াইবে। ও আল্লাহ মোর পোলাডার এরম অইলো কে। তিনি আরও বলেন, মোর পোলাডার লাশটা দেশে আইন্যা দেন। মুই শেষবারের মতো মোর পোলাডার মুখ দেখতে চাই। সরকারের কাছে দাবি জানাই মোর পোলার লাশটা যেন সরকার দেশে আনার ব্যবস্থা করে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, বায়জিদ নামে এক প্রবাসীর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। সৌদি আরব থেকে বায়েজিদের মরদেহ আনার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এজন্য তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে জমা দেওয়ার জন্য বলেছি। এছাড়া তাদের পরিবারকে অর্থিকভাবেও সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৪
এসএম