ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পল্লবীতে গৃহবধূ নিহত: মাদক-আধিপত্য দ্বন্দ্বে গোলাগুলির নেপথ্যে আল ইসলাম 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৪
পল্লবীতে গৃহবধূ নিহত: মাদক-আধিপত্য দ্বন্দ্বে গোলাগুলির নেপথ্যে আল ইসলাম 

রাজধানীর পল্লবী থানার বাউনিয়াবাদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গোলাগুলিতে নিজ বাসার ভেতর গুলিবিদ্ধ হয়ে আয়েশা আক্তার নামে এক গৃহবধূ নিহত হন।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় পল্লবী জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই সেনাবাহিনীর একটি দল এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আল ইসলামকে আটক করে পল্লবী থানা পুলিশে সোপর্দ করে। জানা গেছে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সংঘটিত ওই গোলাগুলির ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকেই নেতৃত্ব দেন আল ইসলাম।

সূত্র জানায়, বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে পল্লবী থানাধীন মিরপুর সেকশন- ১১ এর বাউনিয়াবাঁধ বি ব্লকে চিহ্নিত অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী মমিন, শাবু, সম্রাট, শামিম, জয়নাল, ইদ্রিস, কালা মোতালেব, কামাল, জাহাঙ্গীর, আল ইসলাম, ভেজাল মামুন, জয়, ইউনুস, রুবেলসহ অজ্ঞাত নামা ১৪/১৫ জন এলাকার শীর্ষ মাদক কারবারি ফতের ভাই মামুনের কাছে চাঁদা দাবি করে। এনিয়ে কথা কাটাকাটি ও তর্কের এক পর্যায়ে গোলাগুলি হয়। তাতে বাউনিয়াবাঁধ বি ব্লকের ১৭/১৮ বাসার দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি করিডোরে দাঁড়ানো আয়েশা আক্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

নিহত আয়েশার (৩০) স্বামী মিরাজ পেশায় বাস চালক। ওই ভবনের তৃতীয় তলায় ১টি রুম ভাড়া নিয়ে ১০ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছিলেন তারা।  

মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মাকছেদুর রহমান জানান, বাউনিয়াবাদ এলাকায় গুলিতে নারী মৃত্যুর ঘটনায় আল ইসলামের সম্পৃক্তা পাওয়া গেছে। তিনি ঘটনাস্থালে উপস্থিত থেকে নেপথ্য  নেতৃত্ব দিয়েছেন। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অন্যান্য জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

চাঁদাবাজি, দখল, মাদকের কারবার সবখানেই আল ইসলাম
  
আল ইসলামের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, রাজধানীর পল্লবীতে চাঁদাবাজি, মাদক কারবার আর দখল বাণিজ্যের মূলহোতা এই আল ইসলাম। কারো জমি কেনার তথ্য পেলেই আল ইসলাম ও তার ভাই জাহাঙ্গীরের লোকজন গিয়ে চাঁদাদাবি করতেন। চাঁদা না পেলে হামলা করতেন অথবা মিথ্যে মামলায় দিনের পর দিন হয়রানি করতেন। আল ইসলামের বিরুদ্ধেও হত্যা, হামলা, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে অন্তত ডজনখানেক মামলা রয়েছে।

বাউনিয়াবাদ এলাকায় ভাঙ্গারির ব্যবসা রয়েছে আল ইসলামের। সেই ভাঙ্গারির ব্যবসার আড়ালে মাদক কারবারে জড়িত রয়েছেন তিনি।  

পল্লবী থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পল্লবীর বাউনিয়াবাদ এলাকায় বেড়ে ওঠা আল ইসলাম ও তার ভাই জাহাঙ্গীর এক সময় নিজেরা ভাঙ্গারি মালামাল কেনা-বেচা করতেন। তবে এর আড়ালে তারা শুরু করেন মাদকের কারবার। মাদক কারবার চালানোর জন্য ৪০-৫০ জনের একটি গ্রুপ রয়েছে তাদের। যাদেরকে দিয়ে মাদক বিক্রি ও বিরোধী বা প্রতিপক্ষদের দমন করা হতো। ছোট ছোট এলাকা ভাগ করে এসব সহযোগীদের দায়িত্ব দেয়া হয়। যাদের দ্বারা ওইসব এলাকার মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। মাদক কারবারের পাশাপাশি জমি দখল ও চাঁদাবাজিতেও ছিল তার বিস্তার।

পল্লবীতে জমি কিনতে বা ফ্ল্যাট করতে যারা চাঁদা দিতেন অথবা নীরবে নির্যাতন সইতেন তারাই কেবল এলাকায় থাকতে পারছেন। চাঁদা না দেয়ায় নির্যাতন, মামলা করে অনেক ভুক্তভোগীই এলাকা ছাড়া হয়েছেন।

শফিকুল ইসলাম নামে এক জমির মালিকের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন আল ইসলাম। চাঁদা না দেয়ায় তার ওপরে হামলা হয়। পিটিয়ে আহত করা হয় জমির কেয়ারটেকারসহ অন্যদের। মারধরের অভিযোগে ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম মামলা করেন। এরপর প্রাণনাসের হুমকিতে আর বাসায় থাকতে পারছেন না ভুক্তভোগী শফিকুল।

জানা গেছে, আল ইসলামের বিরুদ্ধে থানা পুলিশে অনেক অভিযোগ জমা পড়লেও অদৃশ শক্তিতে ছাড়া পেতেন তিনি।  

৫ আগস্টের পর বিএনপির সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়েছেন 

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে আল ইসলাম ও তার সহযোগীরা। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মিরপুর পল্লবী এলাকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন আল ইসলাম। সেই সখ্যতার ছবি প্রচার করে এখন তিনি আরো বেপরোয়া।

গত ৬ আগস্ট সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আবুল কালাম আজাদের উপর হামলা করে হাত ভেঙে দেয় আল ইসলামের বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এই হামলার একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, আল ইসলাম ও তার সহযোগীরা ভুক্তভোগী সার্জেন্ট আজাদকে ঘিরে ধরে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মাঝ রাস্তায় ফেলে দেয়।

এতদিন অপকর্ম করেও পার পেয়ে গেলেও নিরীহ গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার(৩০ অক্টোবর) রাতে আল ইসলাম ও তার ভাই জাহাঙ্গীরসহ একাধিক জনের নাম উল্লেখ করে পল্লবী থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাছাড়া আল ইসলামের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা রয়েছে জানান তারা।  

গৃহবধূ নিহতের ঘটনায় বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন উল্লেখ করে মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার পহন চাকমা বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৪
এমএমআই/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।