ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সূবর্ণচরে ছেলের মামলা-হামলায় বাড়িছাড়া বৃদ্ধা মা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৪
সূবর্ণচরে ছেলের মামলা-হামলায় বাড়িছাড়া বৃদ্ধা মা

নোয়াখালী: নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ছেলের মামলা-হামলায় বাড়িছাড়া হয়েছেন এক বৃদ্ধা মা। ভুক্তভোগী আয়েশা আক্তার (৭৯) উপজেলার চরজুবলী গ্রামের প্রয়াত হাজী সিদ্দিক উল্যার স্ত্রী।

ছেলের ভয়ে গত পাঁচদিন ধরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। নিরুপায় হয়ে ছেলের বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই মা।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের এক আত্মীয় বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী আয়েশা আক্তার। তিনি জানান, তার দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে বড় ছেলে ফয়েজ উল্যাহ ও তার স্ত্রী পপি তাকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেই চলছে।  

সংবাদ সম্মেলনে আয়েশা আক্তার আরও বলেন, বড় ছেলেকে তার বাবা সুবর্ণচরে মোটরসাইকেল শোরুম ও ডিলার ব্যবসা ধরিয়ে দেন। ব্যবসায় দেড় কোটি টাকা লোকসান করেন তিনি। পরবর্তীতে ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আমার অনুরোধে তার বাবা গ্যারান্টার হয়ে সুবর্ণচর ইসলামী ব্যাংক শাখা থেকে ২৫ লাখ টাকা সিসি লোন নিয়ে দেন। এক বছর পর সিসি লোন না দিয়ে ব্যাংকের অফিসারের যোগসাজশে স্বাক্ষর জাল করে লোন বর্ধিত করে আমার ছেলে।  

বিষয়টি জানতে পেরে তার বাবা দুর্নীতি কমিশন সহ বিভিন্নস্থানে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ দেন।  এ নিয়ে একাধিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে ফয়েজ উল্যার ইন্ধনে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোন নোটিশ ছাড়াই দোকান ভিটি নিলামের নোটিশ টাঙিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, একপর্যায়ে সব ওয়ারিশসহ জমি বিক্রি করে সুদ সহ ব্যাংকের ৩৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। তবুও দোকান ভিটি থেকে যায় ফয়েজের দখলে। এভাবে ৩৮ লাখ টাকা যায় তার পকেটে। দোকান ভাড়ার ২৬ হাজার টাকাও দীর্ঘ দিন থেকে সে ভোগ করছে। সবার অজান্তে দুই বোনকে নিয়ে ওয়ারিশি সম্পত্তি ৪০ লাখ টাকা বিক্রি করে দেয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে আবার সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক ঝগড়ার সূত্রপাত হয়। ছেলের দোকান থাকা অবস্থায় আমার মাসে ৮-১০ হাজার টাকার ওষুধ লাগতো। তা চাইলে সে তার স্ত্রী পপির কথা শুনে আমাকে প্রহার করে।  

স্বামীর সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি ছেলের নামে লিখে দেওয়ার জন্য আমার ওপর শারীরিক অত্যাচার করে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটায়। বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে মানববন্ধন করিয়ে মিথ্যাচার করে আমার বিরুদ্ধে।  

বৃদ্ধা মা কান্না কণ্ঠে বলেন, পূর্বের ঘটনায় যদি আমার ছেলের বিচার হতো, তাহলে সে আজ আমাকে বাড়ি ছাড়া করার সাহস পেতো না। সরকার ও প্রশাসনের কাছে তার যথাযথ বিচার চাই।  

চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন মিয়া জানান, বৃদ্ধা মা তার দুই ছেলেসহ এক বাড়িতে বসবান করেন। ঘর তোলাকে কেন্দ্র করে ওই বৃদ্ধা নারীর বড় ছেলে মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় মাসহ চারজনকে আসামিকে করে মা দায়ের করে ভুক্তভোগীর স্ত্রী মারজান আক্তার পপি। ওই মামলায় মাসহ দুই নারীকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। পরে বৃদ্ধা মা জামিনে বের হয়ে আসেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।