কুষ্টিয়া: বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন কুষ্টিয়ার জগতিতে আন্তঃনগর ট্রেন থামার স্টোপেজ এবং বন্ধ থাকা স্টেশনটি পুনরায় চালুসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে এলাকাবাসী। এ সময় স্থানীয়রা লাল পতাকা দেখিয়ে ট্রেনটির গতি রোধ করে রেললাইনে বিক্ষোভ করেন।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে জগতি স্টেশনে পৌঁছালে আন্দোলনকারীরা প্লাটফর্মে ট্রেনটিকে দাঁড় করিয়ে দেশের প্রথম রেলওয়ে জগতি প্রতিষ্ঠা ১৬২তম দিবস উপলক্ষে কেক কাটে এবং তাদের পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে ট্রেনটিকে আটকে রাখে। পরে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি জগতি স্টেশন ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
তাদের দাবিগুলো হলো- জগতি রেল-ভবনের সংস্কার করতে হবে, জগতি রেলস্টেশনকে আধুনিকায়ন করতে হবে, জগতি স্টেশনের টিকিট অনলাইনে কেনার ব্যবস্থা করতে হবে, জগতি রেলস্টেশনের প্রথম রেল ভবনকে প্রত্নতাত্ত্বিক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং জগতি রেলস্টেশনের পুরোনো ভবনের ছবি অনলাইন টিকিটের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা রোকনুজ্জামান বলেন, দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন হলো এই জগতি স্টেশন। কিন্তু এখানে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন থামে না। তাই আমাদের সবার দাবি এই স্টেশনে যেন এই রুটের সব আন্তঃনগর ট্রেন থামে তার ব্যবস্থা করা।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই স্টেশনটিকে আধুনিকায়ন করে রেলওয়ের সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য। জগতি স্টেশন একটি ঐতিহ্যবাহী স্টেশন। এর সম্মান রক্ষার্থে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
শফিউর রহমান বলেন, এটি ব্রিটিশের আমলে তৈরি স্টেশন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এখানে একটি মাত্র লোকাল ট্রেন ছাড়া কোনো ট্রেন থামে না। ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এই স্টেশন পুনরায় চালু ও আধুনিকায়ন করা। এর ফলে শহরের যানজট কমবে। এটিকে টার্মিনাল স্টেশন হিসেবে আধুনিকায়ন করলে শ্রমজীবী মানুষের জন্য উপকার হবে। সেই সঙ্গে এখানে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা রয়েছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্যসহ চাল পরিবহনে বিশেষ সুবিধা হবে।
সালেহা খাতুন বলেন, এক সময় এই স্টেশনটি ছিল জাকজমকপূর্ণ। কিন্তু এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে প্রায়। কোনো আন্তঃনগর ট্রেন এখানে থামে না। রেলওয়ে সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে আছে স্টেশনটি। আমরা পুনরায় এই স্টেশনটি চালুর দাবি জানায়।
মানবাধিকার কর্মী হাসান আলী বলেন, দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে এটির অস্তিত্ব ও ঐতিহ্য রক্ষায় রেল হেরিটেজ হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে স্টেশনটির পূর্বের রূপকে অবিকৃত রেখে সংস্কার করা সময়ে দাবি। পূর্বের বাষ্প চালিত রেল ইঞ্জিন এসে এই জগতি স্টেশনে পানি খেত, অথচ আজকের রেল সেখানে থামে না। সেই বিশাল আকৃতির পানি খাওয়া সরোবর এখন গাছদানীতে পরিণত হয়েছে।
রেলওয়ের খুলনা বিভাগের গার্ড (গ্রেড-২) ও আটকে থাকা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক মাহবুবুল ইসলাম জানান, লাল ফ্ল্যাগ দেখিয়ে স্থানীয়রা বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এক্সপ্রেস (৭৯৫/৭৯৬) ট্রেনটি জগতি স্টেশনে পৌঁছালে অবরুদ্ধ করে তারা পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করে দু ঘণ্টা সময় ধরে আটকে রাখে। পরবর্তী স্থানীয় জনজনের দাবিগুলোকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে স্থানীয়রা ট্রেনটি ছেড়ে দেয়।
কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার ইতিয়ারা খাতুন জানান, জগতি স্টেশনে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে থাকার কারণে নির্ধারিত সময় থেকে দুই ঘণ্টা বিলম্বে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে আসে ট্রেনটি। এছাড়া সিঙ্গেল লাইন হওয়ার কারণে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী নকশিকাঁথা ট্রেনটি কুষ্টিয়া স্টেশনে আটকা পড়ে। এছাড়া টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১ ঘণ্টা বিলম্ব করে কুষ্টিয়া স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
এসআরএস