টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে প্রায় ৬০ লাখ ঘটফুট আস্তর বালু (প্লাস্টার বালু) ২৬ লাখ ঘটফুট ভিটি মাটি হিসেবে নিলামে কম দামে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এতে করে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।
জানা যায়, সম্প্রতি পলশিয়া চেয়ারম্যানের ঘাটে অভিযান চালিয়ে বালু জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর সেই বালু (২৬ লাখ ঘটফুট) গত ৭ জানুয়ারি নিলামের মাধ্যমে এক টাকা ৮৫ পয়সা দরে মোট ৪৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে জহুরা ইন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ।
টাঙ্গাইল জেলায় একমাত্র উপজেলা যেটি, নির্মাণ বালু বা প্লাস্টার বালুর ঘাট। এ উপজেলায় প্রায় ১১টি স্পটে নির্মাণ বালু বিক্রি হয়ে থাকে দীর্ঘদিন ধরে। আর এসব স্পটে সিরাজগঞ্জের শিমলা ও চন্ডাল বয়রা বালু মহাল থেকে ব্যবসায়ীরা বালু কিনে ভুঞাপুরের বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করেন। এরপর শুরু করেন বালু বিক্রি। সম্প্রতি উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পলশিয়া এলাকার চেয়ারম্যানের ঘাটে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। সেখানে স্তূপ করে রাখা ২৬ লাখ ঘনফুট ভিটি বালু জব্দ করেন বলে জানান এ কর্মকর্তা। তবে স্থানীয়রা বলছেন, সেখানে কোনো ভিটি বালু (নিম্নমানের বালু) নেই। যা আছে, সবই সিরাজগঞ্জ থেকে কিনে আনা আস্তর বালু (প্লাস্টার বালু)।
অভিযোগ উঠেছে, জব্দকৃত ২৬ লাখ ঘটফুট বালু কাউকে কিছু না জানিয়ে, কোনো বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে সহকারী কমিশনার তার নিজের ইচ্ছামতো নিলাম ডাকেন। এছাড়া কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। আস্তর বালু এভাবে ভিটি বালু দেখিয়ে নিলামে বিক্রি করে দেওয়ায় কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ ঘাটে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ লাখ ঘনফুট আস্তর বালু রয়েছে। জহুরা ইন্টারপ্রাইজকে মাত্র এক টাকা ৮৫ পয়সা দরে ৬০ লাখ ঘনফুট বালু মাত্র ২৬ লাখ ঘনফুট দেখিয়ে নিলামে পাইয়ে দেন সহকারী কমিশনার। এতে তিনি নিয়েছেন বাড়তি সুবিধাও। একদিকে বালুর পরিমাণ কম দেখানো হয়েছে, অন্যদিকে আস্তর বালু ভিটি বালু হিসেবে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। এটা চরম অনিয়ম। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, তিনটি স্থানে স্তূপ করে রাখা রয়েছে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ লাখ ঘনফুট আস্তর বালু। আর এ বালু বিক্রি হয় প্রতি সিএফটি ছয় টাকা দরে। তবে এ আস্তর বালু নিলামে উঠে হয়ে গেছে ভিটি বালু। আর এতে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলাম জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ২৬ লাখ ঘনফুট ভিটি বালু জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ এক টাকা ৮৫ পয়সা দরে বিক্রি করা হয়েছে। সেখানে কোনো আস্তর বালু নেই।
একই সঙ্গে তিনি জানান, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি জেলায় এভাবেই নিলাম করা হয়, এ কারণে তিনিও করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, জব্দ করা বালু কীভাবে নিলামে তোলা হয়েছে এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারই (ভূমি) ভালো ব্যখ্যা দিতে পারবেন। এ কারণে তার সঙ্গেই এ বিষয়ে কথা বলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৫
এসআই