ঢাকা: বিমানের রোম ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকিতে তটস্থ হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে দ্রুততম সময়ে গঠিত ‘থ্রেট অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটি’ বোমা হুমকি যাচাই করে ‘ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার’ অ্যাক্টিভেট করেছিল।
সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে রোম থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৩৫৬-তে বোমা হামলার হুমকির খবর পাওয়া যায়। অজ্ঞাতনামা একটি মেসেজের মাধ্যমে এই হুমকি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সব প্রকার সতর্কতা অবলম্বন করে।
বোমা হুমকির খবরটি পাওয়ার সাথে সাথেই বিমানবন্দরের নিয়ম অনুযায়ী, নির্ধারিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘থ্রেট অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটি’ বোমা হুমকি যাচাই করে ‘ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যাক্টিভেট’ করা হয়। ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার বিমানবন্দরে বোমা হামলা মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সব দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে জানানো হলে সংস্থাসমূহ বিমান অবতরণের আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়।
বিমানটি স্থানীয় সময় বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৯টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে। এসময় বিমানটিতে ২৫০ জন যাত্রী এবং ১৩ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। অবতরণের পর পরই বিমানটিকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাত্রী এবং ক্রুদেরকে দ্রুত নিরাপদে টার্মিনাল ভবনে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় বিমান ও তার আশেপাশের এলাকার সর্বাত্মক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে সিভিল এভিয়েশনের সিকিউরিটি (এভসেক), বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, টাস্ক ফোর্স, কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স এবং সাধারণ আনসার সদস্যবৃন্দ, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিকিউরিটি বিভাগ, এপিএস, জিএসই টিম, বিমানবন্দরের ফায়ার শাখা, স্বাস্থ্য শাখা এবং সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সদস্যবৃন্দ।
এরপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট বিমানটি তল্লাশি এবং পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করে। বোমা তল্লাশি এবং সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রমে অপেক্ষমাণ থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে সহায়তা করে অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, পুলিশ সদর দপ্তরের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ।
এছাড়াও, ডগ স্কোয়াড টিম নিয়ে প্রয়োজনীয় তল্লাশি কাজে সহায়তা করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ডগ স্কোয়াডসমূহ।
নিরাপত্তা ও তল্লাশি সংক্রান্ত সব কার্যক্রম শেষে কোনো ধরনের বোমার সন্ধান না পাওয়ায় দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমান ও তার আশপাশের সকল এলাকা নিরাপদ ঘোষণা করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর যাত্রীদের ব্যাগেজসমূহ যাত্রীদেরকে হস্তান্তর করা হলে তারা বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
এদিকে, বিকেলে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বেবিচক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি এই অনভিপ্রেত ঘটনায় সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করায় এভিয়েশন সিকিউরিটি, বিমান বাহিনী, এপিবিএন, র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, হেলথ, আনসারসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম অন-সিন কমান্ডার হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এভিয়েশন সিকিউরিটির পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন ডেপুটি অন-সিন কমান্ডার হিসেবে কাজ করে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, সকল সংস্থা সমন্বিতভাবে খুব সুন্দর কাজ করেছে। তাদের একযোগে কাজ করার কারণে পুরো পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ভবিষ্যতে এভাবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারব।
আরও পড়ুন>> বিমানে বোমা হামলার হুমকি আসে পাকিস্তানি
বোমা হামলার হুমকি পাওয়া সেই বিমানে তল্লাশি
বাংলাদেশ সময়:২৩৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
এমআইএইচ/এসএএইচ