ঢাকা: নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে ছাত্রসমাজের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এমন পরিস্থিতিতে নানা মহল থেকে নানা প্রতিক্রিয়া আসছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে, খুনি, গণহত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট হাসিনার কোনো বক্তব্য যদি মিডিয়াতে প্রচার করা হয়, সেটার পরিণতি সেই মিডিয়াকেই নিতে হবে।
সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ প্রসঙ্গ এ দেশে আর নেই। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কসাই। তার কোনো ভাষণ যদি এখন কোনো গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়, তাহলে সে গণমাধ্যম শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করছে বলে ধরে নিতে হবে।
এক সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে হাসনাত বলেন, ‘৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ চ্যাপ্টার ক্লোজড। তারা যদি প্রাসঙ্গিক থাকতই, তাহলে ৫ আগস্ট পালায়ে যাইতে হইত না। ’
এদিকে দিল্লিতে বসে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে শেখ হাসিনার ভাষণের প্রতিবাদে রাতে ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ নামে একটি কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এর অংশ হিসেবে একটি মিছিল রাত ৮টায় শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে যাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন আলোচনা চলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আজ রাতে ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে। ’
ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে লাখ লাখ মানুষকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিদেশে অবস্থানরত লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য।
নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কাডাল রানি লাইভে যাবে যখন, তখন সবাই যান ৩২ নম্বরে। বাকি কাম সাইরা আইসেন এইবার। লাখে লাখে মানুষ আসেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। আওয়াজ তোলেন, থাকবে না, ৩২ নম্বর থাকবে না। ’
আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘হাতুড়ি, শাবল, গাইতি নিয়ে আসুন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসুন। ইতিহাসের দায় মোচন করতে আসুন। ফ্যাসিবাদের আতুরঘর নিশ্চিহ্ন করতে আসুন। গান গাইতে গাইতে আসুন, স্লোগান দিতে দিতে আসুন, সন্তানের হাত ধরে আসুন, প্রেমিক প্রেমিকাকে সাথে নিয়ে আসুন, মুখে হাসি আর বুকে প্রতিরোধের আগুন নিয়ে আসুন। ’
তিনি আরও লেখেন, ‘ফ্যাসিবাদের ধ্বংসস্তূপের ওপরে ছাত্র জনতার বিজয় নিশান ওড়াতে আসুন। আজ রাত ৯টায়। ইতিহাস রচিত হোক। আবু সাঈদ, মুগ্ধরাও আসবে আপনাদের দেখানো পথে। আসুন অসমাপ্ত কাজ আজ আমরা সম্পাদন করি। ইতিহাসের দায় মোচন করি। ’
‘ধানমন্ডি-৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’- শিরোনামে একটি পোস্টার ফেসবুকে পোস্ট করে বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন লেখেন, আপার বক্তব্যের তালে তালে বুলডোজার চলবে। আজ রাত ৯টায়।
পোস্টারে লেখা, ‘হাজারো ছাত্রজনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতার প্রতিবাদে ২৪ এর বিপ্লবী ছাত্রজনতার উদ্যোগে আজ রাত ৯টায় বুলডোজার মিছিল কর্মসূচি পালিত হবে। ’
লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট ফাহাম আবদুস সালাম ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘শেখ হাসিনা যদি কোনোদিন পাবলিক অ্যাড্রেস করে - অ্যান্টি ফ্যাসিস্টদের সরাসরি ঘোষণা দেওয়া উচিত যে - আমরা টুঙ্গিপাড়া কবরসৌধ বুলডোজ করে পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিলিয়ে দেব। সরকারের কোনো বাধা দেওয়া উচিত না। আমরা বাংলাদেশের সব বুলডোজার টুঙ্গিপাড়া নিয়ে যাব। সারা জীবনে কোনোদিন যদি পাবলিক অ্যাড্রেস করে - এইটা হবে পরিণতি। ’
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়ি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত এ বাড়িতেই থাকতেন শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান। বাড়িটি পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হতো ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে। এমনকি হাসিনার অনুগত অনেক সরকারি আমলাও এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের কার্যক্রম শুরু করতেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৫
নিউজ ডেস্ক