ঢাকা, সোমবার, ১৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৩ মার্চ ২০২৫, ০২ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

প্রথম রমজানেই জমজমাট চকবাজারের ইফতার বাজার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৫
প্রথম রমজানেই জমজমাট চকবাজারের ইফতার বাজার জমজমাট চকবাজারের ইফতার বাজার। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: বছর ঘুরে আবার এল পবিত্র রমজান মাস। প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানে ঐতিহ্যবাহী ইফতারের বাহারি খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন রাজধানীর চকবাজারের ব্যবসায়ীরা।

রোজার মাসে ঢাকাবাসীর কাছে চকবাজার হয়ে ওঠে বাহারি ইফতার সামগ্রীর স্বর্গরাজ্য। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ভিড়ে জমে উঠে চকবাজার।  

এবার প্রথম রমজানেই জমে উঠেছে চকবাজারের ইফতার বাজার।

রোববার (০২ মার্চ) পুরান ঢাকার চকবাজার শাহী জামে মসজিদদের সামনের রাস্তা ঘুরে দেখা যায়, চকবাজারের রাস্তার দুই পাশেই ভ্রাম্যামাণ ইফতারের দোকান বসানো হয়েছে। আজ দুপুর থেকে চকবাজারের শাহি মসজিদের সামনে দোকানিরা ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতারি কেনার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করতে থাকে। বিকেলে বাড়ে ইফতারসামগ্রী কিনতে আসা মানুষের সমাগম। ক্রেতারা বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে পছন্দের আইটেম কিনতে দেখা গেছে। এছাড়া তৈরি করা হচ্ছে মুখরোচক নানা সুপরিচিত ঐতিহ্যবাহী খাবার। রাস্তার শুরু থেকেই হাজারও মানুষ লাইন দিয়ে ঢুকছে। কোনো দোকানের সামনে এক মুহূর্ত দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। সবাই যেন স্রোতের গতিতে ভেসে চলছে।  

চকবাজারে বাহারি ইফতার

দোকানগুলোকে দেখা মিলেছে ঐতিহ্যবাহী শাহী দই বড়া। বাটিতে বাটিতে সাজানো দই বড়ার দাম ১২০ থেকে ২৪০ টাকা। উন্মুক্তভাবে বানানো হচ্ছে বড় বড় শাহী জিলাপি, যার দাম সাড়ে ৩০০ টাকা। এরপরেই দেখা মিলেছে চিকেন বল ৩৫ টাকা, শাহী পরোটা ৮০-১২০ টাকা, স্পেশাল পরোটা ১৫০ টাকা, টানা পরোটা ৪০ টাকা, চিকেন নাগেট ৮০ টাকা, চিকেন লেগ ১০০ টাকা।

আরও দেখা মিলেছে, খাসির রান ৮০০ টাকা, চিকেন তন্দুরি ১৫০ টাকা, চিকেন কারি ১৫০ টাকা, গরু কারি ১৬০ টাকা, মাঠা ১০০ টাকা কেজি, আস্ত গ্রিল ৭০০ টাকা, বিফ জালি কাবাব ১২০ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি, খাসির জালি কাবাব ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি, কোয়েল পাখি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ছোট মুরগি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পিস, বড় মুরগি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পিস এবং বড় বাপের পোলায় খায় ৮০০ টাকা কেজি।

পুরান ঢাকার বাহারি ইফতার সামগ্রী

এছাড়া আরও দেখা গেছে, সুতি কাবাব, জালি কাবাব, মুঠি জালি কাবাব, টিকা কাবাব, নার্গিস চাপ, শাহী জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, ডিম চপ, রোস্ট, দই বড়া, হালিম, নূরানি লাচ্ছি, পনির, পেস্তা বাদাম শরবত, পরোটা, ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ফালুদাসহ নানা আইটেম।  

ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, আজকে কথা বলার সময় নেই। আগে বেচাকেনা করি তারপর কথা বলব৷ আসলে এটি ঐতিহ্যবাহী ইফতারের বাজার। তাই এখানে ইফতার কিনতে আসে লাখো মানুষ। বড় বাপের পোলাসহ বেশকিছু আইটেমে ক্রেতাদের আকর্ষণ রয়েছে।  

চকবাজারের শাহী পরোটা ও ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রেতা মো. আল-আমিন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম রোজায় বিক্রি একটু বেশি হয়েছে। মানুষ প্রথম দিকে কষ্ট করে হলেও ইফতার কিনছে কিন্তু এভাবে তো প্রতিদিন কিনবে না। মাংস, পেঁয়াজ, আটা, তেলসহ সবকিছুর দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে আমরাও দাম না বাড়িয়ে পারছি না। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরাও অপারগ। তবে গত বছরের তুলনায় দাম ১৯/২০ হবে।  

লাবাং বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ক্রেতা আসছেন, দেখছেন, দাম জিজ্ঞাসা করছে কিন্তু কিনছে। যেভাবে দাম বেড়েছে তাতে অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। মানুষের হাতে টাকা নাই; টাকা না থাকলে কিনবেন কীভাবে?

ইফতার সামগ্রী কিনতে আসা কাঠ ব্যবসায়ী মো. রাসেল হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরই চকবাজারের ইফতারির স্বাদ নিতে আসি। এবার রমজানের প্রথম দিন চলে এলাম। আমার পরিবারে মা-বাবা ও ভাই-বোনসহ সবাই ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ খাবারটি পছন্দ করেন। পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করার সময় এই খাবারটি রাখতেই হয়। ৮০০ টাকা কেজি নিলাম। জিনিসের দাম বেড়েছে অনেক। এবারের আয়োজন বেশ জমজমাট হয়েছে।

ইতিহাস বলে, ঢাকার এই এলাকার ইফতারির এমন ঐতিহ্য চার শতাব্দীর। আদিকালে এখানে ইফতার করাকে বলা হতো ‘রোজা খোলাই’। রোজা খোলাই শব্দটি অনেক পাঠকের কাছে নতুন মনে হলেও রমজান মাসে পুরান ঢাকার আদি বাসিন্দারা এই শব্দটির ব্যবহারে এখনও অভ্যস্ত। ইফতারি বানানোর রেওয়াজ পুরান ঢাকা এলাকার প্রতি ঘরে ঘরে। তারপরও বাইরের খাবারে আকর্ষণ যেন ছাড়ে না। সে কারণেই বাইরের ইফতারির টান সেই আদিকাল থেকেই চলে আসছে। রমজান মাসজুড়ে তাই এই আদি জনপদে ইফতারির যেন মেলা বসে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২৫
জিসিজি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।