ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৩ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

বরগুনার সাবেক ইউএনও-ওসিসহ চারজনের নামে মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৫
বরগুনার সাবেক ইউএনও-ওসিসহ চারজনের নামে মামলা মো. শামীম মিয়া ও আবুল কাসেম মো. মিজানুর রহমান

বরগুনা: বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তথ্য চাওয়ার অপরাধে এক সাংবাদিককে আটক রেখে এক লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।  

সোমবার (৩ মার্চ) বরগুনার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ আনিসুজ্জামান মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (পিবিআই) পটুয়াখালীকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

আসামিরা হলেন- বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক ইউএনও (বর্তমানে হাতীবান্ধা) মো. শামীম মিয়া (৩৮), বরগুনা সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যুরিস্ট পুলিশ ঢাকা হেডকোয়ার্টার ইন্সপেক্টর) আবুল কাসেম মো. মিজানুর রহমান (৫০), বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (বর্তমানে ভোলা সদর) মো. জিয়াউর রহমান (৪৪) ও বরগুনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল রানা (৪৫)।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বরগুনা কেজি স্কুল রোডের আবদুল মান্নানের ছেলে অপরাধ বিচিত্রার সাংবাদিক মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই দুপুর অনুমানিক ১২টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে যান। বাদী তার কাছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের অধীন বরগুনায় ৫ কোটি ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য চান। তিনি বাদীকে আংশিক তথ্য দিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কক্ষে যেতে বলেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাদীকে দুদিন পর আসতে বলেন। বাদী দুদিন পর আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কক্ষে যান। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাদীকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে চলে যান। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাদীকে জানান তাকে কোনো তথ্য দেওয়া হবে না। এ সময় বাদী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলেন, আমার কাছে কিছু তথ্য আছে। এ তথ্য দিয়ে নিউজ করা যাবে। এমন সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কক্ষে আসেন। তিনি নির্দেশ দেন বাদীকে ধরার জন্য। আনসার সদস্যরা বাদীর জামার কলার ধরে টেনে-হিঁচড়ে শামীম মিয়ার সরকারি গাড়িতে উঠান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাদীকে বলেন, এক লাখ টাকা চাঁদা দিলে ছেড়ে দেবে। চাঁদা না দিলে সরকারি কাজে বাধাসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িত করবো। বাদী চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় শামীম মিয়ার সরকারি গাড়িতে বরগুনা থানায় পাঠিয়ে দেন। বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাসেম মিজানুর রহমান ও এসআই সোহেল রানা বাদীকে দুপুর ১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অন্যায়ভাবে থানায় আটক করে রাখেন।  

বাদী বলেন, বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিয়া ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নির্দেশে এসআই সোহেল রানা আমার আইডি কার্ড জব্দ করেন। আমার ফোনে ৫ কোটি টাকার দুর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল তা মুছে ফেলেন। পতিত শেখ হাসিনার আমলে ওই আসামিরা ক্ষমতা দেখিয়ে আমার মানসম্মান নষ্ট করেছে। ওই চারজন আসামি আমাকে থানা হাজতে আটক রেখে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এতে আমি সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। বরগুনার সাংবাদিকরা জানতে পেয়ে বরগুনা থানায় আসেন। পরে আসামিরা আমার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন।

এ ব্যাপারে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিয়া বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কোনো ঘটনা ঘটলে তিনি তাৎক্ষণিক আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন। একজন নাগরিকের মামলা করার অধিকার আছে। আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হবে আমি দোষী কিনা।

বরগুনা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাসেম মিজানুর রহমান বলেন, ও সেই ব্যাপার। রাশেদকে আমার থানায় রাখছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হবে কেন। আমি কী দোষ করেছি।  

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানকে ফোন কল করে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২৫
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।