যশোর: মুহূর্তেই চিরচেনা যানজটের চিত্র পাল্টে স্বস্তির শহরে পরিণত হয়েছে যশোর। গুরুত্বপূর্ণ যেসব সড়কে পথচারীদের দীর্ঘসময় আটকে থাকতে হতো সেসব দিয়ে প্রচুর যানবাহন চলাচল করলেও কোন জট নেই।
যশোর শহরের এই বদলে যাওয়া চিত্র কয়েকদিন থেকে উপভোগ করছেন নাগরিকেরা। যা অব্যাহত রাখতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে।
যানজট দূরীকরণের পাশাপাশি পবিত্র রমজান উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কয়েকস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তাবলয় তৈরির কথাও জানানো হয়েছে যশোর পুলিশের পক্ষ থেকে।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই সভায় যে কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগের কথা বলা হয়েছিল তারমধ্যে যশোরের যানজট এবং পবিত্র রমজান উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি ছিল উল্লেখযোগ্য।
যশোর শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানের মধ্যে দড়াটানা, জেনারেল হাসপাতাল মোড়, চিত্রা মোড়, চৌরাস্তা, মাইকপট্টি, ঈদগাহ মোড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মাঝেমধ্যে এসব এলাকা অতিক্রম করতে নাজেহাল হয়ে পড়েন পথচারীরা। বিশেষ করে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য যারা বাইরে বের হন তাদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে।
ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদির সময়গুলোতে সেই যানজটের তীব্রতা মানুষের দুর্ভোগকে চরমে পৌঁছে দেয়। পবিত্র রমজানের একমাসে শহরবাসীকে এই দুর্ভোগ মেনে নিয়েই এতদিন চলাচল এবং প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হয়েছে।
তবে, কয়েকদিন থেকেই (পুলিশ প্রশাসনের দাবি ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে) যশোর শহরের যানজট যেন উধাও হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার সাথে সাথে যত্রতত্র রিকশা, ইজিবাইক (অটোরিকশা) দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত এ ধরনের কোনো বাহন দেখলেই তা সাথে সাথে জব্দ করা হবে। চালক বা মালিককে দিতে হবে জরিমানা।
অপারেশন কার্যকর করতে সোমবার (০৩ মার্চ) সকাল থেকেই পৌর প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সদস্যদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে মাঠে সক্রিয় দেখা যায়। যা আজ মঙ্গলবারও (০৪ মার্চ) অব্যাহত রয়েছে।
ট্রাফিক সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশের অন্যান্য সদস্যরাও যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। আছেন ছাত্র প্রতিনিধিরাও। অযথা শহরের কোথাও কোনো রিকশা-বাইক দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। জটলা করতে দেয়া হচ্ছে না দড়াটানা, চৌরাস্তায় বড়বাজারে প্রবেশ মুখগুলোতে।
প্রশাসনের এই উদ্যোগতে স্বাগত জানিয়ে শহরবাসী তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মারুফা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, দু’একদিনের জন্য কিছু করলে হবে না। প্রশাসন যানজট নিরসনের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে তার সুফল ধরে রাখতে গেলে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
বড়বাজারে সদাই কিনতে এসেছিলেন শেখহাটি এলাকার গৃহিনী শিউলি পারভীন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতি বছর রোজার এই সময়ে গাড়িঘোড়ার ঠ্যালাই রাস্তাঘাটে চলা যেতো না। আজ সব কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগতেছে। মনে হচ্ছে শহরে হরতাল’।
শিউলি পারভীন বলেন, প্রধান রাস্তা থেকে শুরু করে বাজারের মধ্যকার অলি-গলিতে রিকশা-বাইকের কারণে মানুষই চলাচল করতে পারতো না। এবার স্বস্তি নিয়েই পুরো রমজানে বাজার-সদাই করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চাঁচড়া ইউনিয়নের আলী হায়দার দরকারি কাজে এসেছিলেন যশোর বড়বাজারে। পরিস্থিতি কেমন চানতে চাইলে বাংলানিউজকে বলেন, প্রচুর রিকশা, ভ্যান রয়েছে। বাইকও অনেক। তবে, কোথাও জটলা দেখা যাচ্ছে না। হাঁটাচলাও করা যাচ্ছে ভালোভাবে।
যশোর পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল হাসান সোমবার (০৩ মার্চ) বাংলানিউজকে বলেন, পবিত্র রমজান মাসজুড়ে এই শহরের যানজট নিরসনে কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এই কাজে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছাত্ররা অংশ নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। এদিন (০৩ মার্চ) ১২ জন ছাত্র প্রতিনিধি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যানজট নিরসনে কাজ করছিলেন বলে জানিয়েছিলেন পৌর প্রশাসক।
যশোরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুর-ই আলম সিদ্দিকীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, রমজানকেন্দ্রীক একটা সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা রয়েছে যশোর পুলিশের। যানজট নিরসনের পাশাপাশি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পুলিশের নিয়মিত টহলের পাশাপাশি রয়েছে ফুট পেট্রোল, পিকেট ডিউটি, বাইক মোবাইল ডিউটি, রণপাহারা ডিউটি এবং ছিনতাই প্রতিরোধে সাদা পোশাকে ডিউটি। এসবের মাধ্যমে পবিত্র রমজানে যশোরে সার্বিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২৫
এসএইচ