ঢাকা: অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, হয়রানি, হিংসা, বিদ্বেষ, অসূয়াসহ নানাবিধ নিপীড়নের ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে বলে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একইসাথে সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় ৫ দফা দাবি জানিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি।
বুধবার (৫ মার্চ) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭ জন শিক্ষক অংশ নেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, নারীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন, মাইক্রো-এগ্রেশনের শিকার হচ্ছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় ছাত্রীকে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী কায়দায় বহিষ্কার করা হয়েছে, যেটি নারীর প্রতি কাঠামোগত (সিস্টেমেটিক) নিপীড়নেরই একটি রূপ বলে আমরা মনে করি। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ন্যক্কারজনকভাবে নারীবিদ্বেষী কথা বলেছেন এবং সেটির সঙ্গে ধর্ম ও আইনের ভুল-ভাল ব্যাখ্যাকে কৌশলে যুক্ত করে দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ধরনের বিদ্বেষ ও নিপীড়ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ঘটছে। এসময় নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘বহিষ্কৃত’ ছাত্রীদের ঘটনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আত্মপ্রকাশের দিন নারীদের ‘নিপীড়নের’ ঘটনা, ঢাকার লালমাটিয়ার চায়ের দোকানে ধূমপানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘মব’ তৈরি, রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতির পর এক নারীকে ‘নিপীড়নের’ ঘটনা এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ঘটনা তুলে ধরা হয়।
এ ঘটনাগুলো তুলে ধরে শিক্ষক নেটওয়ার্ক পাঁচটি দাবি জানায়।
দাবিগুলো-
অবিলম্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধি ও ছাত্রীদের প্রতিনিধি রেখে নতুন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পুনরায় তদন্ত করতে হবে এবং ছাত্রদের মব, সাংবাদিকদের ভূমিকা, ফেসবুকে যৌনবাদী মন্তব্যকারী এবং প্রক্টরদের ভূমিকাও বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন এবং সংলগ্ন এলাকায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতাকর্মীদের দ্বারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের মাধ্যমে দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
লালমাটিয়ায় মব তৈরি করে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করা দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন বক্তব্য ‘যদি-কিন্তু’ ছাড়া প্রত্যাহার করার দাবি জানাই।
বাসে ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে কাণ্ডজ্ঞানহীন সাংবাদিকতার নিন্দা জানাই এবং ওই ডাকাতি ও নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বদলানোর প্রচেষ্টা নিন্দাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের আসিফ মোহাম্মদ শাহান, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমান, একই বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আই ই আর বিভাগের হাসান তৌফিক ইমাম, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সুবর্ণা মজুমদার।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যৈষ্ঠ প্রভাষক হানিয়্যম মারিয়া খান, ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্কের সোশিয়লজি এবং ক্রিমি নল জি বিভাগের গবেষক নাসরিন খন্দকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জেনারেল এডুকেশনের সহযোগী অধ্যাপক ইসমাইল সাদী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক সিরাজাম মুনিরা, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূইয়া।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর রাজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজলী সেহরীন ইসলাম, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরাফাত রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ জেনারেল এডুকেশনের শিক্ষক রাইয়ান রাজী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের ইংরেজি ও মানববিদ্যা বিভাগের প্রভাষক অলিউর সান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো সামিও শীশ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি নিয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক হাবিব জাকারিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দীপ্তি দত্ত, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল ফজল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী ফরিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অভী চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৫
এএটি