ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ চৈত্র ১৪৩১, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২৯৯ পোশাক কারখানা এখনো ঈদ বোনাস দেয়নি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৫
২৯৯ পোশাক কারখানা এখনো ঈদ বোনাস দেয়নি

ঢাকা: আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন ও উৎসব ভাতা বেশির ভাগ কারখানায় পরিশোধ করা হয়েছে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে যেমন স্বস্তি ফিরে এসেছে, উদ্যোক্তারাও চাপমুক্ত হয়েছেন।

তবে দুই হাজার ৫৯১টি কারখানা শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দিলেও ২৯৯টি কারখানা এখনো বোনাস দেয়নি।

শিল্প পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে পাটকল, অন্যান্য কারখানাসহ মোট ৯ হাজার ৬৯৫টি কারখানা রয়েছে।

এর মধ্যে আট হাজার ৩৯টি ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে। তবে চার হাজার ৩৫২টি এখনো মার্চ মাসের বেতন দেয়নি, যা মোট কারখানার ৪৫ শতাংশ।

বিজিএমইএর মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমান জানান, ২৭ মার্চ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ৯৯.৫৩ শতাংশ কারখানা। মার্চ মাসের ১৫ বা ৩০ দিনের বেতন পরিশোধ করেছে ৮৩.২০ শতাংশ কারখানা।

ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে ৯৪.৭৮ শতাংশ কারখানা। ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ ০.৪৭ শতাংশ কারখানায় প্রক্রিয়াধীন।

ধাপে ধাপে ঈদের ছুটি: বিজিএমইএর নির্দেশ অনুযায়ী, ২৬ থেকে ২৯ মার্চের মধ্যে ধাপে ধাপে শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে, যাতে মহাসড়কে যানজটের চাপ কমে।

বেতন-বোনাস না পেলে ঈদে পোশাক শ্রমিকদের ভুখা মিছিল: আজ শনিবারও বেতন-বোনাস না পেলে ঈদের দিনে ভুখা মিছিল করবেন এসব পোশাক শ্রমিক।

তবে শনিবারও সব শ্রমিক বেতন-ভাতা না পেলে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ব্যাংক বন্ধ হলে ঈদের আগে বেতন-ভাতা পরিশোধের সুযোগ থাকবে না।

গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে ঢাকায় শ্রম ভবনের সামনে অস্থান করছেন কয়েক দিন ধরে। মালিকপক্ষ তাদের সবাইকে এক কোটি টাকা ভাগ করে দেওয়ার কথা বলছে, কিন্তু তাদের পাওনা সাত কোটি টাকার বেশি। তারা যদি তাদের পাওনা না পান, তাহলে অবস্থান চালিয়ে যাবেন এবং ঈদের দিন ভুখা মিছিল করবেন।

বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, পরিদর্শক কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতা দেওয়া কারখানার সংখ্যা হচ্ছে এক হাজার ৯৯৭, যা মোট কারখানার ৯৪.৭৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ৯৯.৫৩ শতাংশ বা দুই হাজার ৯৭টি।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘সরকার বলছে প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে যে হিসাব রয়েছে, তাতে ১০ শতাংশেরও বেশি কারখানায় বেতন-বোনাস হয়নি। শনিবারও দেওয়ার কথা আছে। শনিবার বিকেল নাগাদ বাস্তব চিত্র পাওয়া যাবে। কারণ এরপর তো আর বেতন-বোনাস দেওয়ার সুযোগ নেই। ’

তিনি মনে করেন, শ্রম মন্ত্রণালয় শ্রমিকদের স্বার্থে যথাযথ উদ্যোগ নিলে এমন পরিস্থিতি হতো না।  

তিনি আরও বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে কাজ করছে না। তারা মালিকের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। আর বেতন-বোনাসের হিসাব করা হচ্ছে চালু কারখানার হিসাব করে। কিন্তু বাস্তবে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ আছে। কয়েক দিন আগেও তিনটি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গার্মেন্টস মুক্তি আন্দোলনের ইকবাল কবির বলেন, ‘টিএনজেড গ্রুপেরই তিনটি কারখানা। তারা পাঁচ দিন ধরে শ্রম ভবনের সামনে বেতন-ভাতার দাবিতে অবস্থান করছে। গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারে আরও বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় বেতন-বোনাস হয়নি। তাদের শনিবারের আশায় রাখা হয়েছে। শনিবার যদি তারা শেষ পর্যন্ত বেতন-বোনাস না পায়, তাহলে কী হবে?’ বিজিএমইএর সদস্য নয় এ রকম আরও কারখানা আছে। সেগুলোতেও সমস্যা আছে বলে জানান তিনি।

গাজীপুর জেলায় পোশাক কারখানাসহ মোট শিল্প-কারখানা আছে দুই হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যা ৭৭৬।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসপি এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, মোট শিল্পের মধ্যে ১২১টি কারখানা এখনো বোনাস দেয়নি। তারা শনিবারের মধ্যে দেবে আশা করি। তারা শনিবার কাজ করিয়ে বন্ধ দেবে। তবে মার্চ মাসের বেতন দিয়েছে ৮০ শতাংশ কারখানা। এক হাজার ৪৮৯টি কারখানা শুক্রবার থেকে ছুটি হয়েছে। বাকিগুলো শনিবার কাজ করিয়ে ছুটি দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।