ঢাকা: দেশে সৃষ্ট কোনো দূর্ঘটনার সময় উদ্ধার কাজ কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় তৎপরতা চলাকালে সংবাদ কর্মীদের অবস্থান ও করণীয় বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনো মিডিয়ার কারণে কাজে বিঘ্ন ঘটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন বলে বৈঠকসূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত সপ্তাহে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে খেলতে গিয়ে গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে শিশু জিহাদ মারা যাওয়া এবং তার উদ্ধারকাজ চলাকালে মিডিয়া রিপোর্টিং নিয়ে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতেই এই নির্দেশনা এলো, জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্রটি।
হৃদয়বিদারক মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে একনেক সভায় দীর্ঘ আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, জিহাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য মিডিয়া কর্মী ছাড়াও সাধারণ উৎসুক জনতাকেও দোষারোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা এমনভাবে হাজির হই, সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা তাদের কাজে সঠিকভাবে মনোযোগী হতে পারেন না। হাজার হাজার মানুষ এমনভাবে ভিড় করে উদ্ধারকর্মীরা এতে করে যথাযথভাবে তাদের কাজ করতে পারেন না। এতে করে কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা চাই আল্লাহর রহমতে দেশে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে। তবে যদি ঘটে তবে সেক্ষেত্রে দূর্ঘটনা কবলিত এলাকা লাল ও হলুদ টেপে সীমানা বেঁধে দিতে হবে। যাতে করে উদ্ধারকর্মীরা যথাযথভাবে তাদের কাজটি করতে পারেন। ’

একনেক’র দায়িত্বশীল সূত্রটি আরও জানায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শিশু জিহাদের উদ্ধারকাজ দেখেছি এবং সব সময় সর্বশেষ অবস্থা জেনেছি। উদ্ধারকাজ সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। তবে এ সময় দেখেছি কিছু মিডিয়া উদ্ধার কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।
একনেক সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দূর্ঘটনা কবলিত এলাকায় লাল ও হলুদ টেপে ঘিরে দেবেন। এবং সংশ্লিষ্টদের উদ্ধার কাজ করার পরিবেশ তৈরি করবেন। এর পরেও যদি কোনো মিডিয়া লাল ও হলুদ টেপের সীমানার মধ্যে ঢুকে পড়ে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ’
জিহাদের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে নানা ধরনের ভ্রান্ত তথ্যও মিডিয়ায় দেওয়া হয়। এই বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘটনার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে একজন স্পোকসপারসন থাকবেন। তিনিই মিডিয়াকে সর্বশেষ তথ্য দেবেন।
জিহাদের উদ্ধার কাজ চলাকালে মিডিয়ার ভূমিকার জন্য কয়েকজন মন্ত্রীও বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে সূত্রটি জানায়।
একনেক সভায় হরতাল প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, হরতাল রাজনৈতিক বিষয়। বিএনপি-জামায়াত আগে শিশুদের মেরেছে এখন ওরা শিক্ষিকাকেও মারছে। হরতালে সাধারণ মানুষ কেন মরবে? এটা কাম্য নয়।
নোয়াখালীতে পিকেটারের ছোঁড়া ইটের আঘাতে ঢাকার স্কুলশিক্ষিকা শামছুন নাহার (৩৭)’র মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেক সভায় গৃহহীণ ও ভূমিহীনদের বিষয়টিও উঠে আসে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সুরাইয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি দেশের সমস্ত গৃহহীণ ও ভূমিহীনদের জরিপ করেন। দেশে কত মানুষ গৃহহীণ ও ভূমিহীন আছে তাদের ডাটা চাই। দেশের কোনো মানুষ ভূমিহীণ থাকবে না। এছাড়া, ভূমিহীন মানুষও কিছু না কিছু ভূমিও পাবেন। আপনি ডাটা দিন সবার জন্য ব্যবস্থা একটা হবে। ’
২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে এই জরিপ শুরু হবে বলে সুরাইয়া বেগম প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন।
সভাশেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও জানান, দেশের সমস্ত গৃহহীণ ও ভূমিহীনদের জরিপ সম্পন্ন করতে বিবিএসকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মিডিয়া কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যখন দুর্ঘটনা কবলিত স্থানে উদ্ধার কাজ চলবে তখন আমরা যেন একটু দূরত্ব বজায় রাখি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৪