ঢাকা: চমৎকার উদ্যমে নাগরিকরা বাংলাদেশকে ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে চলেছে। সম্ভাবনার এ বাংলাদেশ আর পেছাবে না।
শুক্রবার (০১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই বাংলাদেশ) ২০১৬’র প্রারম্ভিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আব্দুল মতলুব আহমেদ, বেসিস সভাপতি শামীম আহসান।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ খুবই উদ্যমী। কিছু পেলেই তারা ভালো কিছু করার উদ্যোক্তায় পরিণত হতে পারেন। এটি খুব ভালো। তারা সৃজনশীল। এজন্যই বাংলাদেশ এগুচ্ছে। সম্ভাবনার জায়গা থেকে সরবে না এ দেশ।
তিনি বলেন, মহেশখালীতে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎপ্লান্ট তৈরি হচ্ছে। মাতারবাড়িতে জাপানিরা ৪ বিলিয়ন (চারশ কোটি) ডলার বিনিয়োগ করছে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিপ সি পোর্ট হবে। ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে বিদ্যুৎখাতে। আমাদের হাতে আছে ১০ হাজার কোটি টাকা। ২৫/২৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি। তাহলে বাংলাদেশে কী পরিমাণ বিনিয়োগ হবে- ভাবতে পারেন!
শুধু দেশে নয়, বাংলাদেশিরা যেখানে যায়, কিছু করার চেষ্টা করে। যেকোনো দেশে গিয়ে খুব দ্রুত তাদের ভাষা আয়ত্ত করে নিতে পারে। এটি খুব সুবিধা দেয় তাদের, যোগ করেন তিনি।
নসরুল হামিদ বলেন, জেসিআই বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি ‘ব্র্যান্ডনেম’ হিসেবে তুলে ধরতে পারে। আমাদের ঝুড়ি এখন অনেক ভারি, বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, বিদ্যুতের জন্য, ৫টি কয়লা খনিতে ৮০ বিলিয়ন টন, বালি দিয়ে কাঁচ তৈরি হয়।
‘আমরা এক ফোঁটা পেট্রোল আমদানি করি না, নিজেরা তৈরি করি, শুধুমাত্র জেট ফুয়েল, অকটেন আমদানি করি। রিনিউঅ্যাবল এনার্জি, সোলার সিস্টেমে পৃথিবীতে ১ নম্বর দেশ বাংলাদেশ। কারখানার ছাদগুলো সোলার এনার্জি করতে পারি। সব জায়গায় অপার সম্ভাবনা তাই’- বলেন তিনি।
জেসিআই ইন্টারন্যাশনাল’র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশে সংগঠনটির অগ্রগতিতে সক্রিয় অন্যতম সদস্য আমজাদ হোসেন।
তিনি বলেন, লাইফ পরিবর্তনের জন্য প্ল্যান ফোকাস করতে হবে। সফলতার জন্য পুরস্কৃত করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে উদ্যম, উদ্যোগ চাই। সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, ধরে রাখতে ও এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। দেশ এখন যে পর্যায়ে আছে, তা কেবল সামনেই যেতে পারে। আমরা (জেসিআই) সে আশা নিয়েই কাজ করছি। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন অসাধারণ তারুণ্যে ভরা একটি দেশ।
শামীম আহসান বলেন, বাংলাদেশ অগ্রসর হচ্ছে। ছোট ও মাঝারি শিল্প এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। বারাক ওবামা, বান কি মুন সবার মুখে বাংলাদেশের প্রশংসা। ৭০ মিলিয়ন (৭ কোটি) ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে, আইসিটিতে বাংলাদেশকে সেরা উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে গড়তে চাই।
জেসিআই’র প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রতি বছর সংগঠনটি ১০ তরুণকে ‘অনন্য’ হিসেবে পুরস্কার দিচ্ছে। এতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয়। আমিও এ পুরস্কার পেয়েছি। এমন উদ্যোগ ভালো।
১৯৭৩ সালে যাত্রা শুরু করে জেসিআই বাংলাদেশ। এরপর থেকে প্রায় ৮০০ সদস্য দেশব্যাপী যুব উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।
‘নতুন বছরে মূল মনোযোগে থাকবে তরুণরাই। তারা আবারো প্রমাণ করবে- সক্রিয় তারুণ্যই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর’- বলেন জেসিআই বাংলাদেশ’র নতুন সভাপতি (২০১৬) শাখওয়াত হোসেন মামুন।
নির্বাচিত করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে নতুন এ সভাপতি বলেন, সমাজের তরুণদের নিয়ে আমরা যোগাযোগ, সংযোগ বাড়াতে চাই। ভালো ভবিষ্যতের স্বার্থে এটি করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ও আপনারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো পরিবার, সমাজ, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের কোনো না কোনো ভূমিকায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাই আমি মনে করি না, আমার এটিই মূল নেতৃত্বের জায়গা। আশা করি, সবাই বরাবরের মতোই সক্রিয় হবেন ও থাকবেন নতুন বছরেও।
‘সক্রিয় তারুণ্য নিয়েই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। নতুন বছরে তরুণরাই থাকবেন মূল মনোযোগে- এতে কোনো সন্দেহ নেই’- বলেন তিনি।
২০১৬’র জেসিআই ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বেটার ও বিউটিফুল বাংলাদেশ গড়ার জন্য জেসিআই সদস্যরা কাজ করবেন। জাতি ও সমাজের জন্য কিছু করতে হবে।
সরকারের সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, আপনারা পাশে থাকলে আমরা বেটার বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবো। তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশকে বেটার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
২০১৫’র জেসিআই ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম বলেন, আপনি হেরে গেছেন বা জিততে পারেন নি? চিন্তা করবেন না। কারণ যে জিতেনি, তাকে কেউ মনে রাখে না। তবে আপনি যদি জিতে থাকেন, তাহলে ইতিহাসের অংশ হবেন।
তিনি বলেন, প্রত্যেকেই প্রতিদিন নিজের রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিযোগিতাটি প্রথম হবে নিজের অতীতের সঙ্গে।
নজরুল ইসলাম বলেন, স্বপ্ন ছাড়া মানুষ চলতে পারে না।
সদ্য বিদায়ী এ প্রেসিডেন্ট দেশের অগ্রগতিতে প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের দিকেও মনোযোগী হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের লিডার হিসেবে বিশ্বস্ততা থাকতে হবে। সবসময় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সেই সঙ্গে কখনও সুযোগ মিস করা যাবে না। থাকতে হবে প্রশংসা করার মানসিকতাও।
সবাইকে অভিবাদন, নতুন বছরের শুভকামনা ও শিশুনৃত্যে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। বাংলানিউজ, কালের কণ্ঠসহ ৫টি মিডিয়া অনুষ্ঠানের প্রচার সহযোগিতা ছিল। এছাড়া গোল্ড পার্টনার হিসেবে ছিল প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় পরিচালকরা, দেশের ১২টি আঞ্চলিক সংগঠনের সদস্য এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৬
এমআইএইচ/এসকেএস/জেডএস
** ‘নতুন বছরে তরুণরাই থাকবেন মূল মনোযোগে’
** চলছে জেসিআই’র ‘২০১৬ বরণ’ অনুষ্ঠান