সোমবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশব্যাপী একযোগে উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
সারাদেশে ৬৪টি জেলা এবং ৪৯০টি উপজেলায় ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ উন্নয়ন মেলা চলবে ১১ জুলাই পর্যন্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, এমন একটি দিনে উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন হচ্ছে, যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন এবং তার ফাঁসির আদেশ পর্যন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বিশ্বজনমতের চাপে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনি যে বক্তব্য দেন, সে বক্তব্যের মধ্যেই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, এর অর্থনৈতিক নীতিমাল কী হবে, বাংলাদেশ কীভাবে ভবিষ্যতে গড়ে উঠবে এবং বাংলাদেশকে নিয়ে তার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন উদ্ধৃত করেন। এছাড়া বাংলাদেশের জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের কথা অর্থাৎ বাংলাদেশের জনগণ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, খাদ্য পায়, উন্নত জীবন পায়, সেই উন্নত জীবন দানের কথাও তিনি সেই বক্তব্যে বলেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলতে শুরু করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তিনি সে কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতক দলের নির্মম বুলেটের আঘাতে তিনি সপরিবারে শাহাদত বরণ করেন। ছোট বোন আর আমি দেশের বাইরে ছিলাম বলে বেঁচে যাই। তার কন্যা হিসেবে মনে করি, এটা আমার দায়িত্ব- তিনি যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছিলেন, দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন, সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা, এটা আমরা কর্তব্য। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি।
তিনি বলেন, আমরা স্বাধীন দেশ। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর, বাংলাদেশ পিছিয়ে যাচ্ছিল। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ যখন তার (বঙ্গবন্ধু) নেতৃত্ব উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায়, তখনই ঘাতকের দল তাকে আমাদের মাঝ থেকে কেড়ে নেয়। ২১ বছর এদেশের মানুষ শোষিত, বঞ্চিত হয়েছে। এদেশের মানুষের জীবন ধুঁকে ধুঁকে চলেছে। ২১ বছর পর আমরা সরকারে এসে লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেখছি, দেশকে সত্যি উন্নয়ন করা যায়। এটা সম্ভব। কিন্তু ২১ বছর ওই যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধী ক্ষমতা দখলকারীরা দেশকে পিছিয়ে রেখিছিল। যাক, আমাদের সে দুর্দিন কেটে গেছে। এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি। বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আজকে উন্নয়নের রোল মডেল।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। তাই দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা চাই। সহযোগিতা এজন্য যে, দেশকে আমরা যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এর গতি যেন থেমে না যায়। উন্নয়নের গতিধারা যেন সব সময় অব্যাহত থাকে।
উন্নয়ন মেলায় প্রত্যেক জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য তুলে ধরতে স্থানীয় আয়োজকদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ১০০টি অঞ্চল গড়ে তুলবো। দেশি-বিদেশি বিনোয়োগের সাথে সাথে, কোন অঞ্চলে কী কাঁচামাল উৎপন্ন হয় তার ভিত্তির উৎপাদনও আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেই ডিজিটাল কনফারেন্সে এ উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন করতে পারছি।
ভিড়িও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী উন্নয়ন মেলার আয়োজনে সম্পৃক্ত হন। গণভবনে তার সঙ্গে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৭/আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা
ইইউডি/এমজেএফ