বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বেশি কিছু করার নেই।
মায়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিউ তিন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। বুধবার তার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বর্ডার লিয়াজো অফিস ও নিরাপত্তা সহযোগিতা ইস্যুতে দু’টি চুক্তি করতে সম্মত হয়েছে মায়ানমার।
মায়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির বিশেষ দূত হিসেবে কিউ তিন গত মঙ্গলবার (১০ জানুয়ার) বাংলাদেশ সফরে আসেন। বুধবার সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে অং সান সু চির একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। ওই চিঠিতে সু চি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে বুধবার কিউ তিন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক করেন। এরপর তিনি সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মায়ানমারের বিশেষ দূত সে দেশের নতুন সরকারের বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও সহযোগিতা গভীর করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য স্টেট কাউন্সিলর সু চি’র বিশেষ আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর ও সমস্যা সমাধানে মায়ানমারের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। বিশেষ দূত গত বছরের ৯ অক্টোবর সীমান্ত ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশের ভূমিকা ও সহযোগিতার প্রশংসা করেন।
মায়ানমারের গণমাধ্যমে ৯ অক্টোবর সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিতপূর্ণ সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে বিশেষ দূত উল্লেখ করেন, মায়ানমার সরকার কখনও বাংলাদেশকে দোষারোপ করেনি।
তিনি সীমান্ত ব্যবস্থাপনাসহ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। মায়ানমারের নতুন সরকার রাখাইন রাজ্যে মুসলমান জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে ‘কফি আনান কমিশন’ গঠনসহ অনেক উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান। বৈঠকে মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়। তাছাড়া জটিল বিষয়গুলোতে ইতিবাচক ও আন্তরিক আলোচনার আহ্বান জানানো হয়।
গত ৯ অক্টোবর ঘটনার পর থেকে বিপুল সংখ্যক মায়ানমারের নাগরিকের বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬৫,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে এবং অনুপ্রবেশের ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে বিশেষ দূতকে অবহিত করা হয়। বিপুল সংখ্যক মায়ানমারের নাগরিকের অনুপ্রবেশ এবং আনুমানিক ৩ লাখ অনিবন্ধিত নাগরিকের দীর্ঘ অবৈধ অবস্থানের কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম এলাকা বিশেষত কক্সবাজার অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে বিশেষ দূতকে অবহিত করা হয়।
মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ রাখাইন রাজ্যে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানায় যাতে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী মায়ানমারের নাগরিকরা পূর্ণ নিরাপত্তা ও জীবিকার নিশ্চয়তাসহ দ্রুত নিজ আবাসে ফিরে যেতে পারেন। রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর গণহারে বাংলাদেশে আশ্রয়ের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও মূল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মায়ানমারকে অনুরোধ জানানো হয়, যেন এ সমস্যা বারবার তৈরি না হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী মায়ানমারের নাগরিকদের এবং রাখাইন মুসলমানদের নাগরিকত্ব/স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য একটি যথাযথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করে বাংলাদেশ। তাছাড়া বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার প্রস্তাব করে। বিশেষ দূত প্রস্তাবটি তার দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে তুলে ধরবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭/আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা
কেজেড/জেডএস