বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে তিনদিনব্যাপী চা প্রদর্শনীতে নতুন এ চা গাছ অবমুক্ত করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
নতুন দুই জাতের চা সম্পর্কে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় গবেষণার বিভিন্ন দিক ও এ চায়ের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন।
দার্জিলিং চায়ের সুবাস বা ফ্লেভার দেবে বিটি-২০ জাতের এ চা। প্রথমেই জানা যাক ক্লোন কি? ক্লোন হচ্ছে কোনো একক মাতৃবৃক্ষ থেকে অঙ্গজ পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা সমষ্টি।
বিটি-১৯ ক্লোন ডানকান ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাধীন আমু চা বাগানের ১৭ নম্বর সেকশন থেকে বাছাই করা হয়। চা বাগানটি লস্করপুর ভ্যালিতে অবস্থিত। জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতিগত দিক থেকে এলাকাটি খড়াপ্রবণ। সেকশনটিতে ১৯৯৩ সালে প্রাথমিক সিলেকশনের কাজ আরম্ভ করার পর ওই একই বছরের ২৬ জুলাই মাতৃবৃক্ষটিকে এ/১৭/৭ নামে চিহ্নিত করা হয়। ক্লোনটি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় উৎপাদন, গুণগত মান, নার্সারি পর্যায়ের উপযুক্ততা, খরা সহিষ্ণুতা ও মাঠ পর্যবেক্ষণে সম্ভাবনাময় ক্লোন হিসেবে প্রতীয়মান হয়। ক্লোনটি মূলত আসাম জাতের। এর কাণ্ড সুঠাম ও সুবিন্যস্ত। প্রচুর শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। শাখা-প্রশাখা প্রায় খাঁড়া গড়নের সুবিস্তৃত।
মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বিটি-১৯ হচ্ছে অর্থোডক্স চা। অর্থোডক্স চা হচ্ছে দেড় পাতা রোলিং করে তৈরি করা চা। এই চা পানিতে দিলে আস্তে আস্তে দেড় পাতা ওপেন হয়ে যায়। যেহেতু এই চা সিটিসি-(ক্র্যাশ-টিয়ার-কার্ল) করা হয় না তাই এর ফ্লেভার ৭৫ শতাংশ সঞ্চিত থাকে। এটা খুবই স্বাস্থ্যকর চা। চায়নায় শতভাগ লোক অর্থোডক্স চা পান করে।
বিটি-১৯ প্রতি হেক্টরে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কেজি চা উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করেন এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। ক্লোনটি যথেষ্ট বলিষ্ঠ ও খরাসহিষ্ণু। বাছাই ও দীর্ঘমেয়াদী মাঠ পরীক্ষণকালে ক্লোনটির বিভিন্ন পোকা-মাকড়, কৃত্রিম পোকা ও রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা সন্তোষজনক বলে প্রমাণিত। এই চা টিলার গরম ও ঠাণ্ডা ঢাল এবং সমতলভূমির উপযোগী। শেকড়যুক্ত প্রতিটি চারার মূল্য ধরা হয়েছে ২০ টাকা।
বিটি-২০ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা বাজার থেকে যে চা কিনি সেটা হচ্ছে সিটিসি চা। এই সিটিসি চা’র জন্য বিটি-২০ সর্বোত্তম চা হিসেবে বিবেচিত হবে। বিটি-২০ ক্লোনটিও ডানকান ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাধীন আমু চা বাগানের ৮ নম্বর সেকশন থেকে বাছাই করা।
বিটি-২০’র বৈশিষ্ট্য হলো ক্লোনটি আসাম জাতের। এর কাণ্ড সুঠাম ও সুবিন্যস্ত। গাছের কাঠামো মাঝারি আকৃতির ও শাখা-প্রশাখা খাঁড়া গড়নের। ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ের আগমন ও বৃদ্ধি যথেষ্ট সন্তোষজনক। গাছটির পাতার রং মধ্যম সবুজ, মাঝারি থেকে বড় আকৃতির ও মসৃণ। পাতা কাণ্ডের সঙ্গে খাঁড়া অবস্থাবিশিষ্ট। পাতার অগ্রভাগ প্রলম্বিত ও পরিসীমা সুষম খাঁজকাটা। এ চায়ের উৎপাদন ক্ষমতাও ভালো। প্রতি হেক্টরে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কেজি চা উৎপাদন করা যাবে বিটি-২০ এর চারা থেকে।
বিটি-২০ যথেষ্ট বলিষ্ঠ ও খরাসহিষ্ণু। ক্লোনটি সিটিসি--(ক্র্যাশ-টিয়ার-কাল) উপযোগী। তবে অর্থোডক্স পদ্ধতিতেও প্রস্তুত করা যায়। দার্জিলিংয়ে সাড়ে ৭ হাজার ফুট উপরে যে চা উৎপাদন হয় আমাদের দেশে এই দুটি চা সেই একই ফ্লেভার দেবে বলে আশাকরি।
নতুন এ জাত দু’টি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার আশাবাদী বিটি-১৯ ও বিটি-২০ পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খুব ভালো অ্যাডাপটেশন হবে। এটা আমাদের গবেষণার তথ্য। তবে ইতোমধ্যে বিটি-২ ও বিটি-১২ ফার্ম পর্যায়ে পরীক্ষিত হয়েছে ভালো জাত হিসেবে।
চা প্রদর্শনীতে চারা দু’টি অবমুক্ত করার পর এখন অনেক চা চাষি এ জাতের চা উৎপাদনে আগ্রহী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
এসএম/এএ