ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দার্জিলিং চায়ের স্বাদ দেবে বিটি-১৯

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
দার্জিলিং চায়ের স্বাদ দেবে বিটি-১৯ কথা বলছেন বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন/ছবি: দীপু

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে নতুন জাতের চা উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই)। দীর্ঘ ১৭ বছরের গবেষণার ফসল বিটি-১৯ ও বিটি-২০ জাতের দু’টি নতুন ক্লোন পাল্টে দেবে বাংলাদেশের চায়ের গতানুগতিক স্বাদ।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে তিনদিনব্যাপী চা প্রদর্শনীতে নতুন এ চা গাছ অবমুক্ত করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
 
নতুন দুই জাতের চা সম্পর্কে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় গবেষণার বিভিন্ন দিক ও এ চায়ের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন।


 
দার্জিলিং চায়ের সুবাস বা ফ্লেভার দেবে বিটি-২০ জাতের এ চা। প্রথমেই জানা যাক ক্লোন কি? ক্লোন হচ্ছে কোনো একক মাতৃবৃক্ষ থেকে অঙ্গজ পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা সমষ্টি।
 
বিটি-১৯ ক্লোন ডানকান ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাধীন আমু চা বাগানের ১৭ নম্বর সেকশন থেকে বাছাই করা হয়। চা বাগানটি লস্করপুর ভ্যালিতে অবস্থিত। জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতিগত দিক থেকে এলাকাটি খড়াপ্রবণ। সেকশনটিতে ১৯৯৩ সালে প্রাথমিক সিলেকশনের কাজ আরম্ভ করার পর ওই একই বছরের ২৬ জুলাই মাতৃবৃক্ষটিকে এ/১৭/৭ নামে চিহ্নিত করা হয়। ক্লোনটি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় উৎপাদন, গুণগত মান, নার্সারি পর্যায়ের উপযুক্ততা, খরা সহিষ্ণুতা ও মাঠ পর্যবেক্ষণে সম্ভাবনাময় ক্লোন হিসেবে প্রতীয়মান হয়। ক্লোনটি মূলত আসাম জাতের। এর কাণ্ড সুঠাম ও সুবিন্যস্ত। প্রচুর শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। শাখা-প্রশাখা প্রায় খাঁড়া গড়নের সুবিস্তৃত।
 
মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বিটি-১৯ হচ্ছে অর্থোডক্স চা। অর্থোডক্স চা হচ্ছে দেড় পাতা রোলিং করে তৈরি করা চা। এই চা পানিতে দিলে আস্তে আস্তে দেড় পাতা ওপেন হয়ে যায়। যেহেতু এই চা সিটিসি-(ক্র্যাশ-টিয়ার-কার্ল) করা হয় না তাই এর ফ্লেভার ৭৫ শতাংশ সঞ্চিত থাকে। এটা খুবই স্বাস্থ্যকর চা। চায়নায় শতভাগ লোক অর্থোডক্স চা পান করে।
 
কথা বলছেন বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন/ছবি: দীপুবিটি-১৯ প্রতি হেক্টরে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কেজি চা উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করেন এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। ক্লোনটি যথেষ্ট বলিষ্ঠ ও খরাসহিষ্ণু। বাছাই ও দীর্ঘমেয়াদী মাঠ পরীক্ষণকালে ক্লোনটির বিভিন্ন পোকা-মাকড়, কৃত্রিম পোকা ও রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা সন্তোষজনক বলে প্রমাণিত। এই চা টিলার গরম ও ঠাণ্ডা ঢাল এবং সমতলভূমির উপযোগী। শেকড়যুক্ত প্রতিটি চারার মূল্য ধরা হয়েছে ২০ টাকা।
 
বিটি-২০ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা বাজার থেকে যে চা কিনি সেটা হচ্ছে সিটিসি চা। এই সিটিসি চা’র জন্য বিটি-২০ সর্বোত্তম চা হিসেবে বিবেচিত হবে। বিটি-২০ ক্লোনটিও ডানকান ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাধীন আমু চা বাগানের ৮ নম্বর সেকশন থেকে বাছাই করা।
 
বিটি-২০’র বৈশিষ্ট্য হলো ক্লোনটি আসাম জাতের। এর কাণ্ড সুঠাম ও সুবিন্যস্ত। গাছের কাঠামো মাঝারি আকৃতির ও শাখা-প্রশাখা খাঁড়া গড়নের। ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ের আগমন ও বৃদ্ধি যথেষ্ট সন্তোষজনক। গাছটির পাতার রং মধ্যম সবুজ, মাঝারি থেকে বড় আকৃতির ও মসৃণ। পাতা কাণ্ডের সঙ্গে খাঁড়া অবস্থাবিশিষ্ট। পাতার  অগ্রভাগ প্রলম্বিত ও পরিসীমা সুষম খাঁজকাটা। এ চায়ের উৎপাদন ক্ষমতাও ভালো। প্রতি হেক্টরে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কেজি চা উৎপাদন করা যাবে বিটি-২০ এর চারা থেকে।
 
বিটি-২০ যথেষ্ট বলিষ্ঠ ও খরাসহিষ্ণু। ক্লোনটি সিটিসি--(ক্র্যাশ-টিয়ার-কাল) উপযোগী। তবে অর্থোডক্স পদ্ধতিতেও প্রস্তুত করা যায়। দার্জিলিংয়ে সাড়ে ৭ হাজার ফুট উপরে যে চা উৎপাদন হয় আমাদের দেশে এই দুটি চা সেই একই ফ্লেভার দেবে বলে আশাকরি।
 
নতুন এ জাত দু’টি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার আশাবাদী বিটি-১৯ ও বিটি-২০ পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খুব ভালো অ্যাডাপটেশন হবে। এটা আমাদের গবেষণার তথ্য। তবে ইতোমধ্যে বিটি-২ ও বিটি-১২ ফার্ম পর্যায়ে পরীক্ষিত হয়েছে ভালো জাত হিসেবে।

চা প্রদর্শনীতে চারা দু’টি অবমুক্ত করার পর এখন অনেক চা চাষি এ জাতের চা উৎপাদনে আগ্রহী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
এসএম/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।