ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নোংরা রাজনীতির শিকার এমপিপুত্র শুভ! 

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
নোংরা রাজনীতির শিকার এমপিপুত্র শুভ!  সুপ্রিয় ভট্টাচার্য শুভ

যশোর: সুপ্রিয় ভট্টাচার্য শুভ পড়াশোনা করেছেন বিদেশে। দেশে ফিরে এখন সফল ব্যবসায়ী। বাবা ও কাকা সফল রাজনীতিবিদ। ভবিষ্যতে তারও ইচ্ছে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার। অথচ তার বাবা-কাকার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত এক শ্রেণীর অসুস্থ ধারার হঠাৎ গজিয়ে ওঠা রাজনীতিক। যে ঈর্ষার বলি শুভ। 

সম্প্রতি অনৈতিকভাবে একটি নারী কেলেংকারিতে জড়িয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে শুভ ও তার পরিবারের দীর্ঘদিনের সুনাম। অথচ একটি নির্দিষ্ট স্বার্থান্বেষী মহলের মনগড়া তথ্য ছাড়া পুলিশসহ কোনো কর্তৃপক্ষের তথ্য-প্রমাণ মেলেনি।

শুভ যশোর-৫ আসনের (মণিরামপুর) সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্যের ছেলে। তার কাকা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য।

সাধারণ জনগণ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীলদের অভিযোগ, যশোর শহরের হোটেল সিটিপ্লাজা ইন্টারন্যাশনালের মালিক এসএম ইয়াকুব আলীর এমপি হওয়ার খায়েশের কারণেই শুভকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করা হচ্ছে। এই নোংরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি হতে পারে না, তারা দলের শত্রু।

মণিরামপুর উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দাবি, ইয়াকুব আলী গত কয়েকমাস ধরে এলাকায় পোস্টার-ব্যানার টাঙিয়ে উপজেলাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। পত্রিকা ও ফেসবুকে প্রচার করে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। নিজ হোটেলের লোকজন দিয়ে উপজেলার আপামর মানুষের জনপ্রিয় নেতা এমপি স্বপন ভট্টাচার্যের ছেলেকে নিয়ে নোংরা রাজনীতির ছক সাজিয়েছেন।

মণিরামপুরের ভোজগাতি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি চিলে কান নেওয়ার মতোই। কারণ, ‘নারীসহ এমপির ছেলে শুভকে আটকের খবর’ হোটেল সিটি প্লাজা কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছে বলে তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ বের হয়। অথচ ওই সময় শুভকে ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখেছেন অনেকেই।

অন্যদিকে, সিটিপ্লাজা কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকেদের জানায়, তারা শুভর কক্ষে নারী ঢুকতে দেখে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জেলা পুলিশের কোনো শাখা সাংবাদিকদের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে এ ধরনের কোনো খবর পুলিশের কাছে নেই বলেও মিডিয়ায় পাল্টা খবর বেরিয়েছে।  

‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সিটি প্লাজা ও তার মালিক সম্পর্কে যশোরের মানুষের যথেষ্ঠ ধারণা আছে। দিনে একজন এমপির ছেলের ভাড়া নেওয়া কক্ষে একজন পুলিশের নারী এএসআই ঢুকলো আর তারাও জানিয়ে দিলো- এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য সেটা আপামর মানুষ নিজের মনের কাছে প্রশ্ন করলেই উত্তর পেয়ে যাবেন। ’ বলেন রাজ্জাক।

মণিরামপুরের ভোজগাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মোড়ল বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের নোংরামি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এমপি স্বপন ভট্টাচার্যের জনপ্রিয়তা ও আগামীতে ছেলে শুভ’র রাজনৈতিক উত্থান বাধাগ্রস্ত করতেই এ নাটক।  

উপজেলাব্যাপী শোভা পাচ্ছে সিটি প্লাজার মালিক ইয়াকুব আলীর শুভেচ্ছা পোস্টার-ব্যানার। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইয়াকুব আলী জীবনে কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। পাশে ছিলেন না দলীয় নেতা-কর্মীদের সুখ-দুঃখে।  

স্বপন ভট্টাচার্যের অনুসারীদের প্রশ্ন, শুভ একজন এমপির ছেলে এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্যের আপন ভাইপো। তবুও পুলিশ যদি আটক করেই থাকে সেক্ষেত্রে পুলিশ নিশ্চয়ই নিশ্চিত করতো। কিন্তু পুলিশের কেউ বিষয়টি জানেন না বলা শর্তেও বানোয়াট ঘটনা প্রচারে এতো উৎসায়ী কেন সিটিপ্লাজা কর্তৃপক্ষ?

জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
(ওসি) একেএম আজমল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা আমাদের জানা নেই, সবকিছু গুজব।  

এ ব্যাপারে যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্যের ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য শুভ বাংলানিউজকে বলেন, আমি লন্ডন থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে এসে ব্যবসা করি। বর্তমানে বহুজাতিক একটি কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকায় মিটিং-সিটিংয়ে মাসে কমবেশি হোটেল সিটি প্লাজায় যাওয়া হয়। সেদিন আমি সিটি প্লাজায় কিছুক্ষণ অবস্থান করে ব্যবসায়িক কাজে খুলনা যাই। পরে বিভিন্ন মহল থেকে আমাকে ফোনে জানতে চায়, আমি আটক কিনা। এতে আমি হতবাক হয়েছি।

তিনি দাবি করেন, বাবাকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে হেয় করতে এই নোংরামি।  

এমপি স্বপন ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলে সম্পর্কে গোটা উপজেলাবাসী জানেন। তাই এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে হোটেল সিটিপ্লাজা ইন্টারন্যাশনালের মালিক দেশের বাইরে আছেন জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) শেখ সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে ক্লায়েন্ট প্রভাবশালী সেখানে আমরা কেন মিথ্যা তথ্য জানাতে যাবো? 

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ নিজেদের ফেসবুকে লিখেছেন, রাজনীতির মাঠে লড়াই হতে পারে, তবে কারো মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি করে যারা নোংরামি করছে তারা কখনোই আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি হতে পারে না। এ ঘটনায় জড়িতরা শুধু স্বপন ভট্টাচার্যের শত্রু নয়, আওয়ামী লীগেরও শত্রু।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।