ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শহর-গ্রাম-চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে!

ফজলে ইলাহী স্বপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮
শহর-গ্রাম-চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে! ছবি: বাংলানিউজ

কুড়িগ্রাম: “ওহ কি গাড়িয়াল ভাই, হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে”। শহর থেকে দুর্গম এলাকা পর্যন্ত গাড়িয়াল ভাইদের গরুর গাড়ির তৈলতৃষিত চাকার আওয়াজ এখন আর ততোটা কানে না বাজে না। গরুর গাড়ির বদলে আজকাল চোখে পড়ে কেবল ঘোড়ার গাড়ি।

আধুনিক-অত্যাধুনিক যান্ত্রিক পরিবহন ব্যবস্থা প্রসারের এ যুগেও কুড়িগ্রাম এখনো যেন রয়ে গেছে অতীত-বর্তমানের মাঝামাঝি স্থানে। বিশেষ করে কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আর গ্রামাঞ্চল সেকথাই জানান দেয়।

এখানে সময় যেন স্থির হয়ে আছে। ডিজিটাল এই যুগেও এখানে এখনো পশুটানা গাড়িরই দাপট। তবে তা এককালের গরুটানা গাড়ি নয়; বরং ঘোড়ার গাড়ি। গরুর গাড়িকে হটিয়ে এখানে এখন একচেটিয়া জনপ্রিয়তা এই ঘোড়ার গাড়ির। শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, পণ্য পরিবহনে শহরাঞ্চলের রাস্তাঘাটেও ঘোড়ার গাড়ি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

উত্তরের প্রান্তিক জেলা কুড়িগ্রামের শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই ঘোড়ার গাড়ির চলাচল নজর কাড়ে। দুর্গম রাস্তায় কম খরচে পণ্য পরিবহন-সুবিধার কারণেই কমার বদলে বাড়ছে ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা। সেইসঙ্গে এর চাহিদাও।

ঘোড়ার গাড়িতে নদী-বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরে পণ্য আনা-নেয়া সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক বলে অনেক এলাকার ছোট বড় ব্যবসায়ীরা ঝুঁকছেন ঘোড়ার গাড়ির দিকেই।

ছবি: বাংলানিউজঘোড়ার গাড়ির সাথে যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে অনেক দরিদ্র পরিবার। বেকার, দিনমজুর তো বটেই, এক সময়কার রিকশা ও ভ্যানের চালকরাও ঘোড়ার গাড়িতে পণ্য টানছেন প্রতিদিন।

কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় ৪ শতাধিক দুর্গম চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ি বেশ জনপ্রিয়। প্রতিবছর নদী-ভাঙনের শিকার অনেক পরিবারের ফসল ফলানোর মতো তেমন জমি নেই; অনুর্বর চরে নেই কোনো কাজের সুযোগ। তাই ঘোড়ার গাড়িতেই তারা খুঁজছেন জীবিকা নির্বাহের পথ।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর পার্বতীপুরের ঘোড়ার গাড়ির চালক জয়নাল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘লাখ টাকার কমে আজকাইল কেনা যায় না গরু বা মহিষের গাড়ি। তাই গরু-মহিষের গাড়ি কেনার সঙ্গতি না থাকায় ধারকর্য করি ৩৫ হাজার টাকায় ঘোড়ার গাড়ি কিনি কোনোমতে মুই সংসার চালাই। ’

ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার আইরমারী চরের বাসিন্দা জানু শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ‘যাত্রাপুর হাট থেইকা নদীর ঘাটে যাওন লাগে দুই মাইল পথ বালু ঠেলি। অন্য কিছু তো চরে চলে না, তাই ঘোড়ার গাড়ি করিই ঘাটে যাওন লাগে। তাতে খরচও কম, কষ্টও কম হয়। ’

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের পোড়ার চরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘চরে মালামাল পরিবহনে ঘোড়ার গাড়িই ভালো। খরচও কম। অটো বা রিকশা তো চরের বালুতে চলে না। ’

ছবি: বাংলানিউজকুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর কন্ঠেও একই সুর: ‘ঘোড়ার গাড়ি স্বল্প খরচে চরাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে মানুষসহ মালামাল পরিবহনে খরচ কমানোর পাশাপাশি অপরিহার্য বাহনে পরিণত হয়েছে। ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহের পথ  হয়েছে। তেমনি পরিববেশবান্ধব এই যানবাহনটি স্বস্তিও এনেছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘন্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
এফইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।