ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় দিনাজপুরের ৪ উপজেলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় দিনাজপুরের ৪ উপজেলা

দিনাজপুর: ৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় দিনাজপুরের চার উপজেলা। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জেলার বীরগঞ্জ, বোচাগঞ্জ, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলাকে শক্রমুক্ত করে মুক্তি বাহিনী এবং মিত্র বাহিনীর যোদ্ধারা। 

বীরগঞ্জ উপজেলার পাশের ঠাকুরগাঁও জেলা ৩ ডিসেম্বর শক্রমুক্ত হওয়ার পর হানাদার বাহিনী সৈয়দপুরে (পাক বিহার) পালিয়ে যাবার সময় মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। হানাদার বাহিনী বীরগঞ্জ থেকে পিছু হটে বীরগঞ্জ-কাহারোল উপজেলা সীমান্তে দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কে ভাতগাঁও ব্রিজের পুর্ব প্রান্তে অবস্থান নেয়।

এখানে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর তুমুল যুদ্ধে ভাতগাঁও ব্রিজের একাংশ ভেঙে যায়। যুদ্ধে বেশ ক’জন মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর বীরযোদ্ধা শহীদ হন।  

৫ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় মিত্র বাহিনীর বিমান হামলার মধ্যে দিয়ে বীরগঞ্জ শক্রমুক্ত হতে থাকে। রাতেই পুরো এলাকা মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী পুরোপুরি দখল করে নেয়। সকালে বীরগঞ্জের অলিগলিতে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

একই দিনে বোচাগঞ্জ উপজেলাকে শত্রুমুক্ত করে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর যোদ্ধারা। দীর্ঘ নয় মাসের লড়াই সংগ্রামে এ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করেন বোচাগঞ্জের কৃতি সন্তান সাবেক প্রতিমন্ত্রী তৎকালীন তাজউদ্দীন সরকারের বিশেষ দূত প্রয়াত জননেতা আব্দুর রউফ চৌধুরী ও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম আনোয়ারুল হক চৌধুরী নবাব। এ ছাড়া বোচাগঞ্জের ১১৫ জন দামাল ছেলে ও একজন আনসার সদস্যসহ মোট ১১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণপন লড়াই চালিয়ে ১৯৭১ সালের এ দিনে বোচাগঞ্জকে হানাদারমুক্ত করেন। সম্মুখযুদ্ধে ধনতলা গ্রামের আব্দুর বারেক ও এনামুল হক, কাকদুয়ার গ্রামের চিনিরাম দেবশর্মা, বিহাগাঁও গ্রামের কাশেম আলী, রনগাঁও ইউনিয়নের ধনঞ্জয়পুর গ্রামের গুলিয়া বাংরু, বনকোট চুনিয়াপাড়া গ্রামের বীর্যমোহন রায়সহ সর্বমোট ১৩ জন শহীদ হন।

জেলার দক্ষিণের উপজেলা বিরামপুরের ‍মুক্তিযোদ্ধারা সাত নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হুদা ও মেজর নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে তারা বিরামপুরকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করার জন্য শপথবদ্ধ হন।  

৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা পাইলট স্কুলের সামনে ও ঘাটপাড় ব্রিজে প্রচণ্ড শেলিং করে। কেটরা হাটের সম্মুখযুদ্ধে ১৬ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।  
বিরামপুরের পাশের উপজেলা নবাবগঞ্জ হানাদার বাহিনীর দখল থেকে ৬ ডিসেম্বর ভোরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত করেন। টানা নয় মাস যুদ্ধের পর সাত নম্বর সেক্টরের অধীনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শাহ মাহফুজার রহমান, শামসুল আরেফিন, মকবুল হোসনসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর তীব্র আক্রমণের শিকার হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাদের আক্রমণের কারণে পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী। সেখান থেকে হানাদাররা মিত্র বাহিনীর কাছে পরাজিত হবার আশঙ্কায় পিছু হটতে হটতে ঘোড়াঘাট এলাকায় যায় এবং নবাবগঞ্জ উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।