ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৮ ডিসেম্বর বিজয়ের পতাকা উড়ে মৌলভীবাজারে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৯
৮ ডিসেম্বর বিজয়ের পতাকা উড়ে মৌলভীবাজারে

মৌলভীবাজার: দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস হানাদার বাহিনীর কবলে থাকা তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমা সদর হানাদার মুক্ত হয় সাঁড়াশি আক্রমণের মাধ্যমে ১৯৭১ সনের এই দিনে। বিজয় আনন্দে সেদিন উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। মনু নদীর দুই পাড় সেদিন জয় বাংলা স্লোগানে একত্রে মিশেছিল।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ভারতের কৈলাশহর এবং ধর্মনগর সীমান্ত ঘেঁষা হানাদার বাহিনীর বিওপি ধ্বংস করার জন্য যৌথবাহিনী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে পর্যায়ক্রমে আক্রমণ শুরু করেছিল মৌলভীবাজার অঞ্চলে। যুদ্ধের ছক অনুযায়ী ভারতীয় ৮১ মাউন্টেন ব্রিগেডের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সমশেরনগর (চাতলাপুর সীমান্ত) হয়ে মৌলভীবাজার অভিমুখে অগ্রাভিযান পরিচালনার।

সেই অভিযানের ধারাবাহিকতায় মূলত মৌলভীবাজার মুক্ত হয়।

৩ ডিসেম্বর রাতে সিইনসি স্পেশাল গ্রুপের ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আহাদ চৌধুরী (অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী) এবং সহ-অধিনায়ক সৈয়দ মহসীন আলীর (প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী) নেতৃত্বে মুন্সিবাজারে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে রাত ৯টা থেকে যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ চলে ৪, ৫, এবং ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু মুক্তিবাহিনী সফলতার মুখ দেখতে পারেননি সে যুদ্ধে।

মূলত মৌলভীবাজারে ছিল হানাদার বাহিনীর ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার। ফলে অত্র অঞ্চল মুক্তিবাহিনীর দখল নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। অবস্থা পর্যবেক্ষণে এসে ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার মেজর জেনারেল অরোরা যেকোনো মূল্যে পরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৌলভীবাজার শহর দখলের নির্দেশ দেন। ফলে যৌথবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার লক্ষণ সিং পাক বাহিনীকে হটাতে আরও তৎপর হয়ে ওঠেন। ৭ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী ব্যাপক হামলা চালালে ওইদিন দুপুর থেকেই হানাদার বাহিনী ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার (পিটিআই এবং মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ) থেকে পিছু হটতে শুরু করে। ৭ ডিসেম্বর রাত ১০টার মধ্যেই পাক বাহিনী পরাস্ত হয়ে শহর ছাড়তে শুরু করে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মুক্ত স্বাধীন মৌলভীবাজার দেখতে পান জনতা।

সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা করে তৎকালীন মহকুমা (এসডিও) অফিসের সামনে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়ান ৭০ এর গণপরিষদের সদস্য (এমএলএ) বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করে মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা রাতেই বুঝতে পারলাম পাক বাহিনী শহরে আর নেই, কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজনকে দিয়ে খবর নিলাম। জানতে পারলাম তারা সিলেট অভিমুখে পালিয়েছে। সকাল হতেই মনুর উত্তর পাড়ে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যখন চিল্লায়ে বললেন, মৌলভীবাজার মুক্ত হয়ে গেছে; তখন জনতা জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে বিজয় মিছিল বের করে। সেদিনের আনন্দ আজ ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৯
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।