ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্নীতির স্বরূপ উদঘাটনে প্রয়োজন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৯
দুর্নীতির স্বরূপ উদঘাটনে প্রয়োজন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সভায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ন্যায়পাল অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, সব সাংবাদিকতাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। কারণ সব খবরই সন্ধান করে বের করতে হয়। তবে অনেক সংবাদ আছে যেগুলো প্রতিকূলতার মধ্যে বের করে আনা লাগে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভিত্তি খুবই নৈতিক। যখন দুর্নীতি, সহিংসতার মতো বিষয়গুলো বাড়ে তখন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে দেশে সে পরিস্থিতিই চলছে।

সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ প্রেক্ষিত: গণমাধ্যম জবরদখল’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভা শেষে টিআইবি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ দেওয়া হয়।

অনলাইন গণমাধ্যমকে যারা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে তাদের উদ্দেশ্যে সৈয়দ মনজুরুল বলেন, অনলাইনকে কেন প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছি। এখন জিডিটাইজেশনের যুগে সংবাদ মাধ্যমে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। অনলাইন গণমাধ্যম বিকশিত হচ্ছে। সাংবাদিকতাকে অনেকে চাকরি হিসেবে নিচ্ছেন। পেশা হিসেবে নিতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘নিজেকে একজন শিক্ষক পরিচয় দিতে এখন লজ্জা লাগে। ছাত্র নেতাদের ধমকে শিক্ষকরা ভয় পান। আগে শিক্ষক সমিতি শক্তিশালী ছিল। কোনো আন্দোলন হলে পরবর্তী কর্মসূচির জন্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘুরঘুর করতো। কিন্তু এখন শিক্ষকদের কোনো ভিত নেই।

টেলিভিশন সাংবাদিকদের সমালোচনা করে অধ্যাপক মনজুরুল বলেন, ‘যারা বিভিন্ন ইভেন্টে লাইভ সম্প্রচার করেন তাদের অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু একসঙ্গে ১০টি বাংলা শব্দ বলা মনে হয় খুব কষ্টের? তখন, আসলে, কিন্তু, অ্যা, যেমনটা বলছিলাম, আপনি জানেন- এসব শব্দ বলতে বলতে তারা সময়ক্ষেপণ করে। বাংলা ভাষার এত দুর্দিন আমি কখনো দেখিনি। অথচ বিদেশি সাংবাদিকদের দেখেন। তারা খুব অল্প সময়ে অনেকগুলো বিষয়ে কথা বলেন। টু দ্য পয়েন্টে কথা বলেন।

সভায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমে একটি ভীতিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। টিকে থাকার জন্য অনেকে কম্প্রমাইজ করছে। তবে বেসিক জায়গা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে না।  

সভায় সাংবাদিক জুলফিকার আলী মানিক বলেন, সাংবাদিকতা এখন প্রচারযন্ত্র হয়ে গেছে। মাইক্রোফোনের মতো। কিন্তু এ সময়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বেশি হওয়ার কথা ছিল। সাংবাদিকদের যে চরিত্র ছিল সেটা পরিবর্তন হয়েছে।  নিজেদের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, ভোগ বিলাস নিশ্চিতের জন্য সাংবাদিকরা দৌড়াচ্ছেন।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন বলেন, সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্বের অভাব ও স্বাধীনতার অভাব রয়েছে। পোশাদারিত্ব না থাকায় গণমাধ্যম জনগণের জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।

সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম। তিনি সাংবাদিকতার বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিটি পর্যায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের যে যুদ্ধরত রূপে দেখা গেছে, গণমাধ্যম জবরদখলের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচিত। স্পষ্টতই এ পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) এর চলতি বছরের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে গতবারের চেয়ে চার ধাপ নেমে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৫০। অথচ ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয় তখনকার অবস্থান ছিল ১২১।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯
এমএএম/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।