ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মুক্তিযোদ্ধা টিটোর সমাধি পরিষ্কার করে সাংবাদিকদের শ্রদ্ধা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯
মুক্তিযোদ্ধা টিটোর সমাধি পরিষ্কার করে সাংবাদিকদের শ্রদ্ধা

সাভার (ঢাকা): ১৪ ডিসেম্বর সাভার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে আশুলিয়া থানার জিরাব এলাকার ঘোষবাগের নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন একদল মুক্তিযোদ্ধার পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করে। আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনীর ১১ জন সেনা নিহত হয়। আত্মরক্ষার্থে অন্যরা পালিয়ে যায়। শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় সাভারকে।

এ জয়কে আনতে গিয়ে এ দিন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটো পাকবাহিনীর ছোড়া গুলিতে শহীদ হন। পরে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদালয়ের ডেইরিগেটে সমাহিত করা হয়।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ভারতের অন্তিমনগর থেকে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ৫২ জন গেরিলা আশুলিয়ার গাজীবাড়ী এলাকার নেঁদু খার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করেন। সেখানে দেড় মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কয়েক শতাধিক নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা আশুলিয়ার তৈয়বপুর ক্যাম্পে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বে আরও একটি ক্যাম্প তৈরি করে।

১৪ ডিসেম্বর উত্তরবঙ্গ ও টাঙ্গাইল থেকে পাকবাহিনী পালিয়ে সাভার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বে ২৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ঘোষবাগ এলাকার শ্রীগঙ্গা কাঁঠালবাগানে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধের প্রায় কয়েক ঘণ্টা পর পাকবাহিনী পালাতে থাকে। বিজয় নিশ্চিত জেনে আবেগাপ্লুত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটো লাফিয়ে উঠলে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাকবাহিনীর ছোড়া গুলিতে শহীদ হন। পরে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদালয়ের ডেইরিগেটে সমাহিত করা হয়। আর কিশোর মুক্তিযোদ্ধা টিটোর আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়েই ১৪ ডিসেম্বর সাভার-আশুলিয়া হানাদার মুক্ত হয়।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে সাভার ও আশুলিয়ার সাংবাদিকরা মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটোর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যান। তখন সমাধিস্থল অবহেলিত-অপরিচ্ছন্ন থাকায় গণমাধ্যমকর্মীরা নিজ উদ্যোগে সমাধিস্থল পরিষ্কার করে ও সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, স্মৃতিসৌধ, জাহাঙ্গীরনগর, ডেইরি ফার্মসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নানাভাবে সৌন্দর্য বর্ধন করা হচ্ছে। কিন্তু আজ সাভার মুক্ত করতে গিয়ে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটো। তার সমাধিস্থল আজ অবহেলিত-অপরিচ্ছন্ন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা চাইলে কি শহীদ এই যোদ্ধার কবর কি সংরক্ষণ করতে পারে না? এসময় স্থানীয় সাংবাদিকরা ও মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে সমাধি সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান।

টিটোর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাংবাদিক মোজাফফর হোসেন জয় বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর সাংবাদিকরা নিজের উদ্যেগে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা টিটোর সমাধিস্থলে এসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তার আত্মার শান্তিতে দোয়া করি। সেই সঙ্গে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি। বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের আমিনবাজার থেকে স্মৃতি পর্যন্ত প্রতিটি স্থাপনা রং তুলির আঁচড়ে রঙিন করা হয়েছে কিন্তু যার জন্য এ বিজয় এসেছে তার সমাধিস্থলটি অরক্ষিত ও অবহেলিত।

সাভার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আব্দুল হামিদ রঞ্জু বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আসলেই অবহেলিত। শহীদ টিটোর সমাধি সংরক্ষণের জন্য কমপক্ষে অর্ধশতবার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের দরখাস্ত করেছি। মূলত এই সমাধি ডেইরি ফার্ম কর্তৃপক্ষের দেখভাল করার কথা। কিন্তু তারা তা করেন না।  

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা। আমি ঢাকায় মিটিংয়ে আছি। আপনাদের কাছেই বিষয়টি জানলাম। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।