ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নামের মিল থাকায় নিরপরাধ বৃদ্ধ কারাগারে, এএসআই ক্লোজড

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২০
নামের মিল থাকায় নিরপরাধ বৃদ্ধ কারাগারে, এএসআই ক্লোজড নিরপরাধ বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান

পটুয়াখালী: শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় হাবিবুর রহমান (৮০) নামে নিরপরাধ এক বৃদ্ধকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিনকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।  

রোববার (১১ অক্টোবর) দুপুরে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

                  

গলাচিপা উপজেলা শহরের কলেজ রোডের বনানী এলাকার ওই বৃদ্ধকে গত ০৪ অক্টোবর একটি চেক ডিজঅনার মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ব্রাকের দায়ের করা ওই মামলায় পটুয়াখালীর যুগ্ম জেলা দায়রা জজ আদালত এক বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ ৪০ হাজার টাকার অর্থদণ্ডের নির্দেশ দেন।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোডের নাহার গার্মেন্টসের মালিক মো. হাবিবুর রহমান, বাবা নূর মোহাম্মাদ মাস্টার, মুজিবনগর রোড, গলাচিপা পৌর শহরের বাসিন্দা ২০১২ সালের ০৬ আগস্ট তারিখ ব্রাক থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সে সময় তিনি ব্রাকের অনুকূলে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টের (হিসাব নং ২২০০) ঋণের সমপিরমাণ অর্থের একটি চেক জমা দেন।

কিন্তু তিনি ওই ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্রাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের জমা করা চেকটি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ওই ব্যাংকে জমা দিলে তাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়। পরে ব্রাক কর্তৃপক্ষ ০২ মে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। কিন্তু তিনি ব্রাক থেকে ঋণ নেননি মর্মে ১৯ জুন লিখিতভাবে ব্রাক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা ঋণ গ্রহীতা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ রায় দেন পটুয়াখালীর যুগ্ম দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু। রায়ে হাবিবুর রহমানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ঋণের দ্বিগুণ অর্থ অর্থাৎ দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ের দিন ঋণ গ্রহীতা হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুযায়ী শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় গলাচিপা বনানী এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে চলতি বছরের ০৪ অক্টোবর দুপুরে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন এবং ওই দিনই তাকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠায়। ধৃত হাবিবুর রহমানের বাবার নাম নূর মোহাম্মাদ পণ্ডিত।

এদিকে, ঋণ গ্রহীতা হাবিবুর প্রায় পাঁচ বছর আগে গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোড থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে মহিলা কলেজ সড়কে নতুন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন।  ব্যবসার ধরণ পাল্টে তিনি এখন মুদি-মনোহরি ব্যবসা করছেন।

এ ব্যাপারে ধৃত হাবিবুরের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামী কোনো দিন ব্যবসা করেননি। আর আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও নেইনি। আমাদের দুই ছেলে ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করে। ছেলেরাই আমাদের ভরণ-পোষণের জন্য প্রতি মাসে টাকা দেয়, সেই টাকায় আমরা স্বামী-স্ত্রী এখানে বসবাস করি। পুলিশকে বিষয়টি বলেছি কিন্তু তারা শোনেনি।

এ ব্যাপারে গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন বাংলানিউজকে বলেন, আদালত থেকে একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে আমরা তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠাই। কিন্তু পরে জানতে পারি তিনি প্রকৃত আসামি নন। বিষয়টি দুঃখজনক এবং আমার ভুল হয়েছে। তবে নিরপরাধী ওই বৃদ্ধকে কারাগার থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছি।

গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আসামির নাম ও বাবার নামে মিল থাকায় সরল বিশ্বাসে এএসআই আল-আমিন তাকে গ্রেফতার করেন। বিষয়টি আমরা সংশোধন করে এরই মধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি এবং ওই বৃদ্ধকে দ্রুত কারামুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে নিরাপরাধ ওই বৃদ্ধের জামিনের জন্য রোববার পটুয়াখালীর সংশ্লিষ্ট আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।