ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রোহিঙ্গাদের জন্য ৪৮.২% অর্থায়ন অঙ্গীকার পাওয়া গেছে

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২০
রোহিঙ্গাদের জন্য ৪৮.২% অর্থায়ন অঙ্গীকার পাওয়া গেছে জাতিসংঘের লোগো

ঢাকা: রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা— জেআরপি-২০২০ এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্থায়নের অঙ্গীকার পাওয়া গেছে এবং জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রমের পাশাপাশি দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য অবশিষ্ট অর্থের যোগান দরকার, যা কোভিড-১৯ মহামারির মতো পরিস্থিতিতে আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বুধবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকার জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন দিবস উপলক্ষে পাঠানো এ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এ বছরের ভয়াবহ বন্যা মনে করিয়ে দেয়, বাংলাদেশ সত্যিই জলবায়ু জনিত জরুরি অবস্থার প্রথম সারিতে রয়েছে। ১৯৮৯ সালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং ১৯৯৮ সালের পর দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদী বন্যা ছিল এটি। ৫৪ লাখেরও বেশি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০২০ সালের মৌসুমি বন্যা মানুষের জীবন এবং জীবিকার পর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এবং মনে করিয়ে দিচ্ছে, আগামীতে আরও প্রতিকূল অবস্থায় টিকে থাকার জন্য জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মসূচি নেওয়ার মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নের এবং কমিউনিটির সক্ষমতা বাড়ানো দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। দ্রুত এ পরিস্থিতিতে, সব অংশীদারদের উচিত মানবিক সহায়তা এবং উন্নয়ন কর্মসূচির নেক্সাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং জলবায়ু সম্পর্কিত ঝুঁকি বিশ্লেষণ ও প্রশমনের ওপর তাদের সহযোগিতা জোরদার করা।

কক্সবাজার জেলায়, ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)-এর অংশীদার— স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ, রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় এবং বর্ষা মৌসুমের অতিবৃষ্টি ও ঝড়োবাতাসের প্রভাব থেকে কমিউনিটিকে রক্ষা করতে বছরব্যাপী একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। কক্সবাজারে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনের সাড়াদানে মূল ভূমিকায় রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবীরা এবং ক্যাম্প ও আশপাশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় দিন-রাত ব্যাপক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

মানুষের নিরাপত্তা ও জানমাল রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশের সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য, রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবীরা একসঙ্গে কাজ করছেন। পাশাপাশি, আগাম সতর্কতা এবং উদ্ধার কার্যক্রম থেকে শুরু করে ঢাল ব্যবস্থাপনা ও নিরাপদ রাস্তা-ঘাট নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার কর্মীরা কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করছেন। সাইক্লোন প্রস্তুতি কর্মসূচির একজন বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবক মাহমুদ বলেন, ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় আমরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছি, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার তাদের সঙ্গে বিনিময় করেছি। ’

মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো আবহাওয়া জনিত দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে, যেমন সাইক্লোনের মতো জরুরি অবস্থায় সাড়াদানের জন্য ৭২ ঘণ্টার একটি জরুরি সাড়াদান পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছ, যা বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের স্থায়ী আদেশ (এসওডি)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৮ সালে তৈরি করা হয়। আইএসসিজির ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর পিটার কার্ন বলেন, ‘মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে স্থানীয়দের অভিজ্ঞতার আলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বাস্তুচ্যুতি ও হতাহত মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনতে এবং ক্যাম্প ও তার আশেপাশের কমিউনিটির সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। ’

সারা বছর ধরে প্রতিকূল আবহাওয়ার ফলে, প্রায় ৮ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা প্রভাবিত হচ্ছে। এ অঞ্চলটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, বিশেষ করে বর্ষা এবং ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে। বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থী ও আশেপাশের বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীকে নিয়ে গত বছরের তুলনায় এ বছর দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অপেক্ষাকৃত বেশি প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম নিয়েছে। ২০২০ সালের জন্য প্রণীত রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদার সহযোগিতার ফলে তা সম্ভব হয়েছে। জেআরপি-২০২০ এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, এখন পর্যন্ত ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্থায়নের অঙ্গীকার পাওয়া গেছে এবং জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রমের পাশাপাশি দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য অবশিষ্ট অর্থের যোগান দরকার, যা কোভিড-১৯ মহামারির মতো পরিস্থিতিতে আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের ধারাবাহিক সাফল্য রয়েছে এবং দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের কার্যকর অভিযোজনের একটি স্বতন্ত্র উদাহরণ। জাতিসংঘ এবং মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সম্প্রদায়ের সহায়তায় দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের ২০১০ সালের স্থায়ী আদেশ (এসওডি) গত বছর সংশোধন করা হয় এবং ২০১৯ সালের এসওডির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ক্লাস্টার পদ্ধতিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রোটোকলে সংযুক্ত করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে, ইউকেএইড এর সহযোগিতায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় থেকে বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের সমন্বয় ও সহযোগিতার ওপর একটি হ্যান্ডবুক প্রকাশ করা হয়েছে। এ হ্যান্ডবুকটি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সহযোগিতা করতে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২০
টিআর/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।