ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৩ শতাধিক বাল্যবিয়ে বন্ধের রেকর্ড গড়লেন ইউএনও আনিসুর রহমান

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২০
৩ শতাধিক বাল্যবিয়ে বন্ধের রেকর্ড গড়লেন ইউএনও আনিসুর রহমান আনিসুর রহমান

সিরাজগঞ্জ: সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-যে পদেই দায়িত্ব পালন করেন না কেন, বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে মো. আনিসুর রহমান বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেই চলেছেন।  

সকাল, দুপুর কিংবা গভীর রাত- যখনই বাল্যবিয়ে আয়োজনের খবর আসে, ছুটে যান তিনি।

বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন এবং এর কুফল সম্পর্কে অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন।  

গত ২৯ মাসে ৩০৭টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করে রেকর্ড গড়েছেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিসুর রহমান।  

দায়িত্ব পালনকালে তিনি চৌহালী উপজেলায় ৩৪টি, সদর উপজেলায় ২১৬টি ও বেলকুচি উপজেলায় ৫২টিসহ মোট ৩০৭টি বাল্যবিয়ে নিজে উপস্থিত থেকে বন্ধ করেছেন। এদিকে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের টার্গেটগুলোর অন্যতম বাল্যবিয়ে বন্ধে ইউএনও আনিসুর রহমানের ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে জেলা প্রশাসন।

জানা যায়, ২০১৭ সালের শেষ দিকে যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবেও বেশ কয়েক মাস দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেখানে ৩৩ সপ্তাহ কর্মকালে ৩৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও যমুনায় প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১১৪ জেলেকে কারাদণ্ড করেন এ কর্মকর্তা।  

এরপর বদলি হয়ে সদর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগ দেন। এখানে ১৮ মাস দায়িত্ব পালনকালে ২১৬টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন। এ সময়ে বাল্যবিয়ে বন্ধে সদর উপজেলায় ২২ লাখ ৪২ হাজার টাকা জরিমানা এবং ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন তিনি। পাশাপাশি মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে ১১৬ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।  

গত জুলাই মাসে বেলকুচিতে ইউএনও হিসেবে যোগ দেন আনিসুর রহমান। এখানে যোগ দেওয়ার পরও তাঁতসমৃদ্ধ এ অঞ্চলে বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেষ্ট হন তিনি। এখানে এসে আগস্ট মাসে আটটি, সেপ্টেম্বর মাসে ৩১টি ও ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১৩টিসহ মোট ৫৭টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন তিনি। এ উপজেলায় এসেই এক রাতে আট বাল্যবিয়ে বন্ধ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন ইউএনও আনিসুর রহমান।  

তিনি বাল্যবিয়ে বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ছাড়াও গ্রামে গ্রামে গিয়ে উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে এর কুফল সম্পর্কে বাবা-মায়েদের সচেতন করেছেন। স্কুল-মাদ্রাসাতেও তিনি বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানি, মাদক ও জুয়া সম্পর্কে সচেতন করেন এবং সামাজিক এ ব্যাধিগুলো দূর করার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে জনগণের সহযোগিতা চান। এছাড়া বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাওয়া অসহায় দরিদ্র তিন ছাত্রীর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।

বাল্যবিয়ে বন্ধে অবদান রাখায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আনিসুর রহমানকে সম্মাননা দেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, ইউএনএফপিএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. ওসা টরকেলসন ও মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত মিস আয়শা শান শাকির।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৩ জুন আন্তর্জাতিক পাবলিক সার্ভিস দিবসে তৎকালীন জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা ও একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরে জাতীয় কন্যা শিশুদিবসে বর্তমান জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ  তাকে সম্মাননা দেন।  

ইউএনও আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। এর কারণে নারী নির্যাতন, দারিদ্র্য, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, শিশু ও মাতৃমৃত্যুসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা বাড়ে। তাই যার যার অবস্থান থেকে বাল্যবিয়ে রোধে এগিয়ে আসা উচিত। আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।  

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, বাল্যবিয়ের কারণে জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি পায়। সিরাজগঞ্জে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আশংকাজনক। জাতীয় পর্যায়ে যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.৫ শতাংশ, সেখানে সিরাজগঞ্জে ৩.০ শতাংশ। এ কারণে বাল্যবিয়ে রোধ করা অত্যন্ত জরুরি।  

তিনি বলেন, আনিসুর রহমান বাল্যবিয়ে বন্ধে যে ভূমিকা রেখে চলেছেন তা অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। শুধু ইউএনওর একার পক্ষের সম্ভব নয়। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বাল্যবিয়ে রোধে ভূমিকা রাখত হবে। আশা করছি, আনিসুর রহমানকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যান্যরাও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২০
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।