লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন তাণ্ডব চলছে। প্রতিদিনের অব্যাহত ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে দুই উপজেলা।
মেঘনা উপকূলীয় হওয়ায় জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলা প্রায় চার দশক ধরে নদী ভাঙছে। বছরের পর বছর ভাঙতে থাকায় বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।
সারা বছর ধরে মেঘনা ভাঙে। বর্ষা মৌসুমে ভাঙন আরও তীব্র হয়। এবারের বর্ষায় ভাঙন বেড়েছে কয়েক গুণ। সেইসঙ্গে অস্বাভাবিক জোয়ারে ডুবেছে লোকালয়।
তীব্র ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, হাট-বাজার, ফসলি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। ভয়াবহ ভাঙন পরিস্থিতিতে বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। পাঁচ-সাতবার ভাঙনের শিকার হয়ে এখন অনেকেই পথের ভিখারি।
মেঘনা উপকূল ঘুরে দেখা গেছে, রামগতি ও কমলনগরে পর্যাপ্ত বেড়িবাঁধ না থাকায় এখন অরক্ষিত। বর্ষা এলেই এখানে আতঙ্ক দেখা দেয়। নদীর জোয়ার আর বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম। জোয়ারের সময় ফসলি জমি-মাঠ পেরিয়ে পানি ঢুকে পড়ে বসত ঘরে। পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা থেকে রামগতি পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৩২ কিলোমিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় অব্যাহত ভাঙনের মুখে রয়েছে কমলনগর উপজেলার চর কালকিনি, সাহেবেরহাট, চর ফলকন, চর লরেন্স ও পাটারিরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। ভাঙছে রামগতি উপজেলার বালুরচর, বাংলাবাজার, চরগাজী, চর আলগী, সেবাগ্রাম, বড়খেরী, চর রমিজ ও চর আবদুল্লাহ। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে কমলনগর উপজেলার লুধূয়া বাঘার হাটের অন্তত ২০টি দোকান বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও দুই শতাধিক দোকান।
ভাঙনের মুখে থাকা মাতাব্বর ও নাছির নাছিরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, জোয়ার এলেই পানি উঠে বাজার ডুবে যায়। ভাঙন ঠেকানো না গেলে তাদের পথে বসতে হবে।
চর মার্টিন এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জুনাইদ আল হাবীব বলেন, নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় তাদের বাড়ি এখন হুমকির মুখে। নদীর তীর রক্ষা বাঁধ না হলে বাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত চর মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে জোয়ারের সময় মেঘনা উপকূল অরক্ষিত হয়ে পড়ে। জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয় জমির ফসল। ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকরা জানান, নদী ভাঙনের কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। তারা কাঙ্ক্ষিত ফসল না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
চর কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাস্টার সাইফুল্লাহ ও সাহেবেরহাট ইউপির চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, নদী ভাঙনে তাদের ইউনিয়নের অর্ধেকেরও বেশি বিলীন হয়ে গেছে। এখন জোয়ার এলেই ডুবে যায় পুরো এলাকা।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রামগতির ‘আলেকজান্ডার ইউনিয়ন রক্ষা মঞ্চ’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন উপ-কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান রিপন বলেন, ভয়াবহ ভাঙনে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। এখন মেঘনা নদীর জোয়ারে জনতা বাজার, বালুর চর, বাংলাবাজার ও আসলপাড়া এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, রামগতি ও কমলনগরের মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষা রয়েছে।
সম্প্রতি রামগতি ও কমলনগরের ভাঙন পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দ্রুত নদী ভাঙন রোধে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
এসআর/আরবি/