ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ইন্টারনেট বন্ধ হলে ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য

ইয়াসির আরাফাত রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
ইন্টারনেট বন্ধ হলে ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য

ঢাকা: কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ধরে রাখতে সারাবিশ্ব এখন অনলাইন নির্ভর। তাদের দাপ্তরিক কাজ, অফিস-আদালত, ব্যবসা, শিল্প প্রতিষ্ঠান সবই চলছে অনলাইন যোগাযোগের ওপর।

এ অবস্থায় মাটির নিচ থেকে সংযোগের কোনো ব্যবস্থা না করেই ঝুলন্ত আইএসপি ও ক্যাবল টিভি অপারেটরদের লাইনের তার অপসারণ অভিযান শুরু করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস আইএসপি ও ক্যাবল টিভি অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন।

ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোনো আগাম নোটিশ না দিয়ে কোটি কোটি টাকার ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না। সিটি করপোরেশনের এ তার অপসারণ বন্ধ না হলে রোববার (১৮ অক্টোবর) থেকে ইন্টারনেট সেবা প্রতিদিন তিন ঘণ্টা (১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত) বন্ধ রাখার কর্মসূচি দেন তারা।  

তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর অনুরোধ এবং দক্ষিণ সিটির মেয়রের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজনের পর ইন্টারনেট ও ক্যাবল ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে।

এমন সংবাদে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। সব পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে তারা মনে করেন।  

ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, ইন্টারনেট সেবা ব্যহত হলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে শিল্পখাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। স্থবির হয়ে পড়তে পারে তৈরি পোশাক খাত, প্লাস্টিক, ট্যানারিসহ অন্যান্য খাত।  

রপ্তানি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯ পরবর্তী বায়ার না আসায় অনলাইনে অর্ডার ও স্যাম্পল দেখানো্র কাজ সম্পন্ন হয়। এ অবস্থায় ইন্টারনেট বন্ধ করা হলে তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন।  

অপরদিকে অপরিকল্পিতভাবে তার অপসারণ নিয়ে নাখোশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তার শঙ্কা, সিটি করপোরেশনের এমন উদ্যোগে শুধু অর্থনীতি নয়, দাপ্তরিক কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়তে পারে।

এর আগে গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলন করে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং ক্যাবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। সংগঠন দুটি জানায়, মাটির নিচ থেকে সংযোগের কোনো ব্যবস্থা না করেই আইএসপি ও ক্যাবল টিভি অপারেটরদের লাইন অপসারণ করার করে গত দুই মাসে ২০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কয়েক লাখ ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি গ্রাহককে ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

করোনা পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক রাখতে সারাবিশ্বই নির্ভর করছে অনলাইনের ওপর। এখান থেকে সরে আসা মানেই ব্যবসা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকে গুটিয়ে ফেলার সামিল। রপ্তানির খাতগুলোর বায়ার দেশে না এলেও অনলাইনে সব অপারেটর আসছে, পণ্যের দরদামও হচ্ছে অনলাইনে। এ অবস্থায় ইন্টারনেট সমস্যার সমাধান না হলে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় অনেক পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ, এমন শঙ্কার কথা জানান শিল্প উদ্যোক্তারা।

তৈরি পোশাক খাতে ট্রেডের ডিজিটাইজেশনের সূচনা করতে গত বৃহস্পতিবার থেকে সপ্তাহব্যাপী দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে ডিজিটাল ট্রেড উইক। দেশের রপ্তানি খাতকে প্রসারিত করতে এমন আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফ্যাক্টরি ও বায়ার উভয়েরপক্ষেই সোর্সিং সহজ করে সাপ্লাই চেইনের ডিজিটাইজেশন নিশ্চিত করতে কাজ করবে এটি।

এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র পরিচালক ও দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা ফজলে শামিম এহসান বলেন, কোভিড পরবর্তী ইউরোপে সাময়িক লকডাউন চলছে, এর মধ্যে কাজের অর্ডার আসছে অনলাইনে। সরাসরি বার্গেনিং করে পণ্যের দরদাম করা যায়, অনলাইনে কিছুটা দাম কম হলেও অর্ডার আসা, কাজ পাওয়া অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। এ অবস্থায় সেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হলে পথে বসার উপক্রম হবে। বায়ারকে কিভাবে পণ্য দেখাবো, কিভাবে কাজ আসবে, সব শিল্পের জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, শুধু কাজের অর্ডার কেনো আমাদের প্রতিটি কারখানা এখন অনলাইন নির্ভর। শ্রমিকের কাজে যোগদান, বের হওয়া, বেতন, ব্যাংক ট্রানজেকশন সবই অনলাইনে। অফিসের শ্রমিকের সাথে কথা হয় অনলাইনে, সার্বিক কারখানা পরিচালিত হয় অনলাইনে। একটা সময় ছিলো এটা না হলেও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হতো আজকের বিশ্ব সেই পরিস্থিতিতে নেই। এটার সমাধান না হলে স্থবির হয়ে পড়বে সব খাত, বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের পিছিয়ে পড়তে হবে।

তিনি মনে করেন, সব পক্ষ মিলে এ বিষয়ে একটি সমাধানের পথ খুঁজে দেশের অর্থনীতি সচল রাখার পেছনে ভূমিকা রাখবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
ইএআর/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।