রংপুর: রংপুর জেলা পরিষদের সবুজ তরতাজা গাছ মরা, শুকনা, পোকা খাওয়া ও ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে। পাখির অভয়ারণ্য ঘোষিত এসব গাছ কেটে ফেলায় বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
শনিবার (১৭ অক্টোবর) সরেজমিনে ঘুরে এসব তথ্য উঠে আসে।
সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর শীতকালে দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসে রংপুর জেলা পরিষদের সম্মুখে অবস্থিত গাছগুলোতে। দূর-দূরান্ত থেকে পাখিরা এসে নির্ভয়ে বাস করে এসব গাছের ডালে। মূল সড়কের পাশে অবস্থিত এই গাছগুলোতে অতিথি পাখির কিচিরমিচির শোনা যেতো আশেপাশের এলাকা থেকেও। হরেক রকম পাখি ও কিচিরমিচির শুনতে লোকজন ছুটে আসতো দূর-দূরান্ত থেকে। এসব বিবেচনায় এলাকাটিকে ঘোষণা করা হয়েছিল পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে। পাখি শিকার বা বিরক্ত না করতে কঠোর নিষেধ আরোপ করা হয়েছিলো। এছাড়াও নজরকাড়া সারি সারি দেবদারু, আম, কাঁঠাল, মেহেগনিসহ বিভিন্ন জাতের গাছের ছায়ায় প্রাণ জুড়াতো নগরবাসী।
কিন্তু সম্প্রতি ৩৮টি গাছ মরা, শুকনা, পোকা খাওয়া ও ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে কেটে ফেলতে দরপত্র আহ্বান করে জেলা পরিষদ। গত ২২ সেপ্টেম্বর দাখিল করা দরপত্র থেকে ৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বসুনিয়া প্রপার্টিজকে কার্যাদেশ দেয় জেলা পরিষদ। যেখানে দেবদারু, শিমুল, আম, কাঁঠাল, মেহগনি, গগন শিরিষসহ মোট ৩৮টি গাছ কর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়।
তবে সরেজমিনে পরিদর্শনে পোকা খাওয়া, শুকনা বা মরা কোনো গাছ দেখা যায়নি। এখন ধূ-ধূ প্রান্তরে পরিণত হয়েছে রংপুর জেলা পরিষদ। নিচে পড়ে রয়েছে কেটে ফেলা ত্রিশের অধিক গাছ। অনেক গাছ আবার কম বয়সী। সবুজ সতেজ ও তরতাজা সরকারি এসব গাছ অযৌক্তিক অযুহাতে কাটা হচ্ছে। এতে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন বৃক্ষপ্রেমী ও স্থানীয়রা। পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত এসব গাছ কেটে ফেলায় পরিযায়ী পাখি আগামীতে আসা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকে। সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি শীতল ছায়া থেকে বঞ্চিত হবেন তারা।
এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে বলেও জানান পরিবেশবাদীরা।
নগরীর বাসিন্দা আদর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জেলা পরিষদ অভয়ারণ্য ঘোষণা করে তারাই উল্টা গাছ কেটে ফেললো। এতে পরিযায়ী পাখি তো আসবেই না, বরঞ্চ শীতল ছায়া থেকেও বঞ্চিত হবো আমরা।
উদয় চন্দ্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রংপুর শহরে এমন শীতল জায়গা আর কোথাও নেই। প্রায়ই এখানে এসে গা জুড়াইতাম। এখন আর তা হবে না।
কার্যাদেশ পাওয়া রংপুর বসুনিয়া প্রপার্টিজের অংশীদার আশরাফুল আলম টিপু বাংলানিউজকে বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আমরা কার্যাদেশ পেয়েছি। নিয়ম মেনেই জেলা পরিষদ থেকে কিনে আমরা গাছ কাটছি।
মানবাধিকার ও পরিবেশ আন্দোলনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মুনীর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে এমনিতেই বনভূমির পরিমান কম। জেলা পরিষদ সাধারণ মানুষকে অবগত না করে পাখির অভয়ারণ্য এসব গাছ কেন কাটছে তা বোধগম্য নয়। এর ফলে পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, এই গাছগুলোর ভেতর পচন ধরেছে। অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। যেকোনো সময়ে মানুষের গায়ে পড়তে পারতে পারে, সেজন্য দুর্ঘটনারোধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২০
এএটি