ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আব্দুল আজিজ বিদেশে, শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দেবে শুল্ক গোয়েন্দা

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২০
আব্দুল আজিজ বিদেশে, শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দেবে শুল্ক গোয়েন্দা

ঢাকা: রিমেক্স ফুটওয়্যার ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ পলাতক রয়েছেন। তবে তিনি কোন দেশে বা কোথায় আছেন তা চিহ্নিত করতে পারেনি শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতর।

একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন শিগগিরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে জমা দেওয়া হবে বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।  

ওই মামলার আরেক আসামি তার ভাই ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরকে গ্রেফতারের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন আজিজ। তার একাধিক ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে। এছাড়া জাজ মাল্টিমিডিয়ার স্বত্তাধিকারী কোথায় রয়েছেন তার কোনো খবর জানাতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারাও।

শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল আজিজসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৯১৯ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলাটি করেছে শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতর। আর এক হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছে দুদক। জনতা ব্যাংক মামলা করেছে ৩ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা ফেরত না দেওয়ার। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি থেকে বিশাল অংকের এ অর্থ বের করে নেওয়ার ক্ষেত্রে আব্দুল আজিজকে সহযোগিতা করেছেন মা, ভাই, ভাবি, স্ত্রী, ভাতিজি। বৃহৎ এ ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা প্রতিটি মামলায় তাদের আসামিও করা হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুল জাহান মিরা, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান এমএ কাদের এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগম মনি।

এছাড়া ২০১৯ সালে ৩০ জানুয়ারি ৯১৯ কোটি টাকা পাচারের মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন এমএ কাদের। এক বছরের বেশি কারা ভোগ করার পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জামিন পান তিনি। জামিন আবেদনে বলা হয়েছিল ৪৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা তারা জমা দিয়েছেন। মুক্ত হয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের শর্ত অনুযায়ী ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করবেন। যদিও কারামুক্ত হওয়ার পর সে শর্তভুলে গিয়েছেন এমএ কাদের। এখন পর্যন্ত পরিবারটির কাছ থেকে মাত্র ৫০ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছে জনতা ব্যাংক। তবে অধরা থেকে যান এমএ আজিজ।  

এ বিষয়ে কাস্টমস গোয়েন্দার তদন্ত অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, রিমেক্স ফুটওয়্যার ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজকে গ্রেফতারের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে আমাদের গোয়েন্দাদের তথ্য মতে ধারণা করা হচ্ছে আব্দুল আজিজ গ্রেফতার এড়াতে বিদেশ পালিয়ে গেছেন। আব্দুল আজিজ মামলা হওয়ার আগেই দেশের বাইরে চলে যান। তবে তিনি কোন দেশে আছেন সেটা আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। এজন্য দেশে ইমিগ্রেশনগুসহ বিভিন্ন স্থানে চিঠি দেওয়া হয়েছে যাতে আব্দুল আজিজ কোন দিন যদি দেশে আসেন তাহলে দেশের বাইরে যাতে না যেতে পারে। এবিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও নানা খবর এসেছে। আমরা সেগুলোকেও আমলে নিয়ে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও এর সত্যতা এখনও পাওয়া যায়নি। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা আশা করছি শিগগিরই বা চলতি বছরের শেষে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে জমা দেওয়া হবে।  

তিনি জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত বছরের মার্চ মাসে এই মামলার তদন্তের কাজ আমাদের হাতে হস্তান্তর করেন। তখন থেকেই আমরা বিষয়টি গুরুসহকারে তদন্ত করে আসছি। আমাদের তদন্তে কিছু তথ্যও আমরা পেয়েছি। ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেড মোট ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছে আমাদের অনুসন্ধানে তা বেরিয়ে এসেছে।

জানা গেছে, দুই সহোদর এমএ কাদের ও এমএ আজিজের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ক্রিসেন্ট গ্রুপের পাঁচটি কোম্পানির নামে এ অর্থ লুট করা হয়েছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদে দেশের সব ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।  
 প্রকাশিত এসব খেলাপি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ তিনটিই আবদুল আজিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের। সে তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে আবদুল আজিজের প্রতিষ্ঠান রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ১ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এছাড়া ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টের কাছে পাওনা এক হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। একই গ্রুপের রুপালী কম্পোজিটের কাছে পাওনা এক ২৩৯ কোটি টাকা। এছাড়া লেক্সকো লিমিটেডের কাছে ৫১৪ কোটি টাকা ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের কাছে ২৩১ কোটি টাকা পাবে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটি। সব মিলিয়ে আব্দুল আজিজের পরিবারের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ৪ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। এ ঋণের পরিমাণ গত ছয় মাসে আরও বড় হয়েছে। ভুয়া রপ্তানিসহ  নানা প্রতারণার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে এ অর্থ নিয়েছে তারা।  

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের নির্বাহী মো. আবদুছ ছালাম আজাদ গণমাধ্যমকে জানান, আব্দুল আজিজের কোন সন্ধান তাদের কাছে নেই। ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধের আগ্রহ দেখিয়ে কখনই ব্যাংকারদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেননি। ব্যাংকাররা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে খুঁজে পাননি। ব্যাংকের পক্ষ থেকে এম এ কাদের, আব্দুল আজিজসহ ওই পরিবারের ঋণগ্রহীতা সব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৪৩ কোটি টাকার বেশি জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়েছে।

এদিকে, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে দীর্ঘদিন নিজেকে আড়াল করে রাখা সেই আজিজই ফের দৃশ্যপটে হাজির হয়েছিলেন হলিউডে সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে। জনতা ব্যাংকের এক টাকাও ফেরত না দিয়ে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মাসুদ রানা চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেন আব্দুল আজিজ। এ ঘোষণায় তোলপাড় শুরু হয় দেশের সিনেমা পাড়ায়। এরপর বিষয়টি নিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও গত ৩ আগস্ট ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে নতুন পোস্ট দিয়ে ফের আলোচনায় ফিরেন তিনি।  

ফেসবুকে আব্দুল আজিজ লিখেন, ‘হলিউডের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় তিনটি সিনেমা নির্মাণ করছি। নির্মাণ শেষে হলিউডের ডিস্ট্রিবিউশন কোস্পানির মাধ্যমে সিনেমাগুলো বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবে। আমেরিকায় যাচ্ছি, তবে আমি একা নই, বাংলাদেশ থেকে আরও অনেক শিল্পী ও কলাকুশলীকে নিয়ে যাচ্ছি যেমন এমআর-৯, মাসুদ রানা সিনেমার জন্য এবিএম সুমনসহ আরও অনেকে। সিনেমাটি ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিশাল পরিসরে নির্মিত হতে যাচ্ছে। আশা করি, সিনেমাটি ভালো হবে এবং বিশ্বব্যাপী ব্যবসা সফল হবে। ’ 

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২০ 
জিসিজি/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।