ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৬ লাখ টাকা ‘জরিমানা’ দিয়ে বালিকাবধূকে ঘরে তুললেন ৬৩ বছরের বৃদ্ধ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২০
৬ লাখ টাকা ‘জরিমানা’ দিয়ে বালিকাবধূকে ঘরে তুললেন ৬৩ বছরের বৃদ্ধ চেক লিখে দিচ্ছেন আবদুল্লাহ আল নাসের

নীলফামারী: নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ছয় লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে ১৭ বছরের নববধূকে ঘরে তুলেছেন ৬৩ বছরের বর আবদুল্লাহ আল নাসের।

একে বাল্য বিয়ে, তার ওপর কম দেনমোহর দেওয়ায় আবদুল্লাহ আল নাসেরের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

 

ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের মিম আক্তার নামে ১৭ বছর বয়সী এক মেয়ের সঙ্গে ৬৩ বছরের বৃদ্ধ আবদুল্লাহ আল নাসেরের বিয়ে হয় কয়েকদিন আগে। বর আবদুল্লাহ আল নাসের হজ-ওমরাহ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক।  বিয়েতে দেনমোহর ধার্য করা হয় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা।

ঘটনাটি জানাজানি হলে বর নাসেরকে আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে নিতাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এক সালিস বৈঠকের মাধ্যমে ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি রফাদফা করে বরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।  

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মিরপুর উত্তর পাইকপাড়ার আবদুল্লাহ আল নাসের হজে লোক পাঠান। এর সুবাদে তার পরিচয় হয় কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বাসিন্দা আতিকুল ইসলামের সঙ্গে। নাসেরের আগের দুই স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। তিনি আবার বিয়ে করার জন্য আতিককে মেয়ে খুঁজতে বলেন, আতিক এক ঘটকের মাধ্যমে নিতাই ইউনিয়নের খোলাহাটি গ্রামের আব্দুল মতিনের নাতনি ১৭ বছরের মিম আক্তারকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। মেয়েটির নানা আব্দুল মতিন গরিব হওয়ার কারণে গত ২৭ অক্টোবর নগদ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দেনমোহরে ওই বৃদ্ধের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেন। ২৮ অক্টোবর ওই বৃদ্ধ প্রাইভেটকারে করে বালিকাবধূকে নিয়ে নানা শ্বশুর আব্দুল মতিনের বাড়ি বেড়াতে এলে কৌতুহলী লোকজন বৃদ্ধকে প্রাইভেটকারসহ আটকে রাখেন। পরে নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক, একই গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সুরুজ মিয়া, একই গ্রামের সোনা মিয়া, আবুল কালাম কালটু মিয়াসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ছাত্রলীগ নেতা সুরুজের বাড়িতে বর নাসেরকে আটকে রেখে রাতভর সালিশ বৈঠক করেন। বাল্যবিয়ের অপরাধে সালিশে জরিমানা নির্ধারণ করা হয় ছয় লাখ টাকা। চেয়ারম্যান ফারুক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, নীলফামারী শাখায় নিজের অ্যাকাউন্টে (অ্যাকাউন্ট নম্বর- ৫০১১৩০০০০২০, চেক পাতা নম্বর সিএএ ০০০০৪৭৫) এ টাকার চেক নিয়ে বৃদ্ধকে ছেড়ে দেন। পরে বালিকাবধূকে নিয়ে বাসায় যান নাসের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিম আক্তার নিতাই ইউনিয়নের পাগলাটারী ফুলবাড়ি গ্রামের মহুবার মিয়া এবং লুনা বেগমের মেয়ে। মেয়েটির বাবা-মা ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করায় সে খোলাহাটি গ্রামে নানা আব্দুল মতিনের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে। মেয়েটি কিশোরগঞ্জ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। জন্ম নিবন্ধ সনদ অনুযায়ী মেয়েটির জন্ম তারিখ ২২-১১-২০০৩। জন্ম নিবন্ধন নম্বর ২০০৩৭৩৮৪৫৬৯০৩৩৮২৩। জন্ম সনদ ইস্যুর তারিখ ১০-০৪-১৭ ইং।  

বিয়ের কাবিননামা দেখিয়ে আবদুল্লাহ আল নাসের বলেন, আমি ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ওই মেয়েটিকে বিয়ে করেছি।  

তবে কাবিনামায় বর, কনে ও অন্যান্য সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকলেও নিকাহ রেজিস্ট্রারে নাম ও স্বাক্ষর নেই। নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুকের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আবদুল্লাহ আল নাসের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি মাত্র এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে মেয়েটিকে বিয়ে করেছেন। একে বাল্যবিয়ে, তার ওপর দেনমোহর কম হওয়ার কারণে তার কাছ থেকে দেনমোহর বাবদ ছয় লাখ টাকার চেক নেওয়া হয়েছে। টাকা এখানো আমার কাছে গচ্ছিত আছে। যা শিগগিরই মেয়েটিকে দেওয়া হবে।  

কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আউয়াল বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক বিষয়টি সমাধান করে দিতে চাওয়ায় সেখান থেকে পুলিশ চলে আসে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।