ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

২৫ হাজার মেট্রিক টনের কয়লাবাহী জাহাজ ভিড়বে পায়রায়

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২০
২৫ হাজার মেট্রিক টনের কয়লাবাহী জাহাজ ভিড়বে পায়রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টনের কয়লাবাহী জাহাজ ভিড়বে পায়রায়

ঢাকা: কয়লাভিত্তিক দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প ‘পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র’ ইতোমধ্যেই উৎপাদনে এসেছে। দেশের কয়লাভিত্তিক যতগুলো বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে তার মধ্যে পায়রাই প্রথম উৎপাদনে এসেছে।

আধুনিক, পরিবেশ উপযোগী ও কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে পায়রা অন্যতম।  

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটটি ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করছে এবং এখন বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ‘রামনাবাদ চ্যানেলের (ইনার ও আউটার চ্যানেল)’ জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২২ সালের জুন মাস থেকে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরে ন্যূনতম ২৫ হাজার মেট্রিক টনের  জাহাজ ভিড়তে পারবে।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ৪৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।  প্রকল্পটি চলতি সময় ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। পায়রায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিয়মিতভাবে কয়লা সরবরাহের লক্ষ্যে কয়লাবাহী জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। পায়রা বন্দরের নিকট রামনাবাদ চ্যানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করাই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। পায়রা কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিয়মিতভাবে কয়লা সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)-এর পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে এই কয়লা আমদানি করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়া থেকেও কয়লা আমদানি করা হবে। তবে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করলে খরচ কম পড়বে।  

২০৪১ সালের মধ্যে দেশে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এজন্য বিপুল পরিমাণ কয়লা প্রয়োজন। এখন পায়রা বন্দরের গভীরতা না থাকায় প্রথমেই বড় জাহাজে করে কয়লা আনা যাচ্ছে না।  ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিকটনের জাহাজ পায়রা সমুদ্র বন্দরে ভেড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখন ৫৫ হাজার টনের জাহাজে করে অর্ধেক ২৫ হাজার টন করে কয়লা আনা হবে।  বন্দরে ৯ মিটার ড্রাফট হলে তখন বড় জাহাজে করে কয়লা আনা সম্ভব। এতে আমদানি ব্যয় প্রতি টনে অন্তত ৪ ডলার কমে আসবে।

আন্দামানে কয়লা ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। তখন সেখানে বড় জাহাজ এনে এক লাখ ৬০ হাজার টনের জাহাজে পায়রায় কয়লা আনা হবে। কয়লা আমদানির জন্য ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানি পিটি বায়ান রিসোর্স, টিবিকে ও বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) চুক্তি সই হয়েছে।  দশ বছর মেয়াদি এই চুক্তির আওতায় প্রতি বছর সাড়ে চার মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করা হবে। বিশাল কয়লাবাহী জাহাজ পায়রা সমুদ্র বন্দরে আনার লক্ষেই জরুরি ভিত্ত্বিতে প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, পায়রায় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে মূলত আমদানি করা কয়লার উপর নির্ভর করে। পায়রা বন্দরে কয়লাবাহী বড় জাহাজ যাতে করে নিরাপদে বন্দরে ভিড়তে পারে সেই জন্য খনন করা হবে। গভীরতা ঠিক রাখতে  ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। চ্যানেলের গভীর ৬ দশমিক ৩ মিটার।  জোয়ারের সময় ৭ ড্রাফট মিটার হয়ে থাকে। কয়লাবাহী জাহাজ নিরাপদে চ্যানেলে চলাচলে ড্রেইজিং করা হবে। ’

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, রামনাবাদ আউটার ও ইনার চ্যানেলের প্রায় ৭৫ কিলোমিটার অংশে ৯ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ঘনমিটার ড্রেজিং করে চ্যানেলের গভীরতা ৬ দশমিক ৩ মিটার সিডি বজায় রাখা হবে। চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ফলে বন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, স্টিভেডরিং এবং শ্রমিক শ্রেণীর জনগোষ্ঠী সরাসরি প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করবে। পায়রা কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সুবিধার মাধ্যমে দক্ষিণ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবন মান উন্নয়ন করা হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পায়রা বন্দরে ন্যুনতম ২৫ হাজার মেট্রিক টনের জাহাজ হ্যান্ডেলিং করা যাবে। অধিক পরিমাণে জাহাজও হ্যান্ডেলিং করা যাবে। পায়না বন্দরে জোয়ার ভাটার সাহায্য নিয়ে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ চলাচলের জন্য প্রস্তুত থাকবে। পায়রা কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সুবিধার মাধ্যমে দক্ষিণ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২০
এমআইএস/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।